ভাইরাল সেই পঙ্খিরানি এখন ভিআইপি চিকিৎসা পাচ্ছে
পঙ্খিরানির পিঠে চড়ে একসময় আনন্দ পেত মানুষ। জনপ্রতি ২০ টাকা করে পেতেন পঙ্খিরানির মালিক মো. শরীফ। তবে ৪ মার্চ রাতে খামারে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে পঙ্খিরানি। কিছু অংশে দগদগে ঘা হয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখা গেল, সরকারি চিকিৎসক পঙ্খিরানির জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। তাঁর সহযোগীদের কেউ কেউ ড্রেসিং করছেন। খাওয়ার স্যালাইন আনা হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে সবুজ ঘাসের। মালিক মো. শরীফ সেখানে রয়েছেন। চারপাশে উৎসুক জনতারও কমতি নেই।
এই পঙ্খিরানি একটি ঘোড়ার নাম। ঘোড়াটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল। পঙ্খিরানির দুর্দশা দেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে মৌখিক নির্দেশনা পেয়ে ভেটেরিনারি চিকিৎসকেরা এসেছেন। গতকাল ঘোড়াটিকে ভিআইপি চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়েছে।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখা গেল, সরকারি চিকিৎসক পঙ্খিরানির জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। তাঁর সহযোগীদের কেউ কেউ ড্রেসিং করছেন। খাওয়ার স্যালাইন আনা হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে সবুজ ঘাসের।
৪ মার্চের পর থেকে ঘোড়াটিকে ফেলে রাখা হয় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মাঠে। প্রথম দিকে মালিকও পাওয়া যাচ্ছিল না। ভাইরাল হওয়ার পর মালিকের খোঁজ পাওয়া গেছে। মালিক মো. শরীফ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের কাছেই থাকেন। পঙ্খিরানির পিঠে মানুষ চড়িয়ে ব্যবসা করতেন; পাশাপাশি তিনি লেগুনা চালান।
মো. শরীফ জানান, পঙ্খিরানি ছাড়াও তাঁর চারটি বাচ্চা ঘোড়া আছে। জায়গা হয় না বলে পঙ্খিরানিকে মিরপুর ১৩ নম্বরে এক আত্মীয়র খামারে রাতে রাখতেন। ৪ মার্চ খামারে আগুন লাগে। এতে ওই আত্মীয়র তিনটি গরু মারা যায়। পঙ্খিরানি দড়ি ছিঁড়ে বের না হলে পুড়ে মরে যেত।
চিকিৎসা না করে পঙ্খিরানিকে ফেলে রেখেছিলেন কেন—এ প্রশ্নের উত্তরে মো. শরীফ বলেন, তিনি তাঁর মতো করে চিকিৎসা করছিলেন। এর মধ্যে নাকি ফেসবুকে পঙ্খিরানি ভাইরাল হয়েছে। সরকারি চিকিৎসকেরা এসেছেন চিকিৎসা দিতে।
ঘোড়াটির ক্ষতস্থানে ব্যথা আছে। ড্রেসিং করে মলম লাগানো হয়েছে। সফট টিস্যু আক্রান্ত হওয়ায় ইনজেকশন দিতে হবে। সবুজ দানাদার সুষম খাবার, পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হবে।
রাজধানীর কাজী আলাউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের অতিরিক্ত ভেটেরিনারি অফিসার চিকিৎসক নাজমুল হুদা গতকাল সকাল থেকেই পঙ্খিরানির কাছে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৪ মার্চ ঘোড়াটি আগুনে পুড়েছে বলে মালিক জানিয়েছেন। এর মধ্যে ঘোড়াটিকে কোনো ভেটেরিনারি সার্জন বা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে না দেখিয়ে মালিক নিজের মতো করে চিকিৎসা করার চেষ্টা করেছেন। ঘোড়ার শরীরের সামনের অংশের চামড়া পুড়েছে। পেছনের পায়ের মাংসপেশিও পুড়েছে। সামনের পায়ের খুরের ওপরের মাংসপেশির অংশের ক্ষতস্থানে মাছি ডিম পাড়ছে।
মো. শরীফ জানান, পঙ্খিরানি ছাড়াও তাঁর ময়না, বাহাদুরসহ বিভিন্ন নামের চারটি বাচ্চা ঘোড়া আছে। জায়গা হয় না বলে পঙ্খিরানিকে মিরপুর ১৩ নম্বরে এক আত্মীয়ের খামারে রাতে রাখতেন। ৪ মার্চ খামারে আগুন লাগে। এতে ওই আত্মীয়র তিনটি গরু মারা যায়। পঙ্খিরানি দড়ি ছিঁড়ে বের না হলে পুড়ে মরে যেত।
নাজমুল হুদা জানান, ঘোড়াটির ক্ষতস্থানে ব্যথা আছে। ড্রেসিং করে মলম লাগানো হয়েছে। সফট টিস্যু আক্রান্ত হওয়ায় ইনজেকশন দিতে হবে। সবুজ দানাদার সুষম খাবার ও পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হবে। শরীরের ক্ষতস্থানে মশা–মাছি বসতে দেওয়া যাবে না। পানিতে ক্ষতস্থান ভেজানো যাবে না। ধুলাবালু থেকেও ঘোড়াকে দূরে রাখতে হবে।
এত দিন পরে ঘোড়াটির চিকিৎসা করতে কেন এসেছেন, তা জানতে চাইলে চিকিৎসক নাজমুল হুদা বলেন, কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে তিনিসহ ঢাকা শহরে অন্য যে চারটি সরকারি হাসপাতাল আছে, সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এসেছেন ঘোড়াটির সার্বিক অবস্থা দেখার জন্য।
এই চিকিৎসক জানান, ঘোড়াটির সার্বিক দেখভাল করবেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সম্প্রসারণ মু. মিজানুর রহমান। তিনি ঘোড়ার ব্যবস্থাপত্রসহ অন্যান্য করণীয় বুঝে নিচ্ছিলেন। সূত্রাপুর, দক্ষিণখানসহ অন্যান্য জায়গার ভেটেরিনারি সার্জনরাও উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি ওষুধের পাশাপাশি অন্য কোনো ওষুধ লাগলে, পুষ্টিকর খাবার দেওয়া এবং পঙ্খিরানির থাকার জন্য কী ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে কাজ করবে ফাউন্ডেশন।
গতকাল পঙ্খিরানিকে দেখতে গিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের (প ফাউন্ডেশন) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্থপতি রাকিবুল হক। তিনি জানান, পঙ্খিরানি ভাইরাল হওয়ার পর সরকারি চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তাঁদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার থেকেই চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছিল। এখন সরকারি ওষুধের পাশাপাশি অন্য কোনো প্রয়োজনীয় ওষুধ , পুষ্টিকর খাবার এবং পঙ্খিরানির থাকার বন্দোবস্ত করবে ফাউন্ডেশন।
পঙ্খিরানি ভাইরাল হয়ে ভিআইপি চিকিৎসা পাচ্ছে—এটা তাঁর সৌভাগ্য বললেন রাকিবুল হক। কিন্তু তিনি বলেন, অচল হওয়া পোষা প্রাণীকে অবহেলা করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঘোড়া যখন আর উপার্জন করতে পারে না, অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন মালিকেরা চিকিৎসাও করেন না। টাকা খরচ করতে চান না। পঙ্খিরানির মতো সব পশু ভাইরাল হবে না। তাই সব পঙ্খিরানি যাতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ চিকিৎসাসহ নজরদারির আওতায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।