এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে

প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘এসডিজিস ইন সাউথ এশিয়া: এ কম্পারেটিভ স্টাডি অব বাংলাদেশ, নেপাল অ্যান্ড শ্রীলঙ্কা’ বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তওফিক এম হক, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম, বইটির লেখক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসআইপিজির অধ্যাপক সালাহউদ্দীন এম আমিনুজ্জামান, প্রথমা প্রকাশনের মেরিনা ইয়াসমিন ও জাভেদ হুসেন। ঢাকা, ২৭ নভেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে বাংলাদেশের বেশ কিছু খাতে অগ্রগতি আছে। আবার কয়েকটি খাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে নেপাল। দেশটির ওই সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা। শ্রীলঙ্কাও এ ক্ষেত্রে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে। এই দুই দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশের শেখার আছে।

সোমবার ঢাকায় প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘এসডিজিস ইন সাউথ এশিয়া: এ কম্পারেটিভ স্টাডি অব বাংলাদেশ, নেপাল অ্যান্ড শ্রীলঙ্কা’ শীর্ষক বই নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) অধ্যাপক সালাহউদ্দীন এম আমিনুজ্জামানের লেখা এ বই সম্প্রতি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতসহ ১৭টি খাতে উন্নতি করতে হবে। কিন্তু দেশের পুকুর-নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসব প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা না গেলে এসডিজি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের মতো স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।  

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি না হলে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ, সবকিছুর মূল হচ্ছে রাজনৈতিক সমঝোতা। নেপালের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে নেপালে পুলিশের ঘুষ কমে গেছে। এর কারণ, পুলিশের শরীরে ক্যামেরা লাগানো থাকে। এ ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে নেপাল অনেক দূর এগিয়েছে। সেখান থেকে আমাদের শেখার আছে।’

বইটির লেখক অধ্যাপক সালাহউদ্দীন এম আমিনুজ্জামান এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও নেপালের চেয়ে পিছিয়ে আছে। বৈশ্বিক হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী করার ওপরে জোর দেন তিনি।

গবেষণা ও নীতিসহায়ক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএফ) নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, নেপালে গত দুই দশকে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যার ফলাফল নেপাল এখন পাচ্ছে। এসডিজিতে তাদের অগ্রগতি দেখে বোঝা যায় যে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ উন্নয়নের মূল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে স্থানীয় পর্যায়কে গুরুত্ব দিয়েছে। যার সুবিধা তারা এখন পাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে এসডিজি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকা। সরকারের এসডিজি ট্র্যাকার নামে একটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২৪৮টি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৪টির কোনো তথ্য আমরা দিতে পারিনি। আর তথ্যের রাজনীতিকরণ হলে প্রকৃত অর্থে আমাদের উন্নয়নকে বোঝা যাবে না।’

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরে বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন শুধু সরকারের একার কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের যথেষ্ট দায়িত্ব আছে। বেসরকারি খাত এবং এনজিওগুলোকে এ কাজে সম্পৃক্ত করার জন্য গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। সামনের দিনগুলোতে প্রথমা প্রকাশন ও প্রথম আলো এ কাজে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে।

প্রথমা প্রকাশনের মেরিনা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তওফিক এম হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ইতিহাসবিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীনসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিন শিকদারসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।