কখন কোথায় কেমন ভ্রমণ
বছর শেষ হচ্ছে। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বেই এই সময়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য আদর্শ একটা সময়। চাকরিজীবীরা এ সময় লম্বা ছুটি নিয়ে দেশে বা বিদেশের পছন্দের স্থানে ঘুরতে চলে যান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও থাকে শীতকালীন ছুটি, ফলে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ থাকে প্রায় সবারই।
ভ্রমণে যাওয়ার জন্য আদর্শ সময় শীতকাল হলেও অনেকেই ভ্রমণের স্থান, ঋতু ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে তাঁদের ‘ভ্যাকেশন প্ল্যান’ করেন। ব্যক্তিভেদে ভ্রমণের পছন্দ ও ধরনও আলাদা হয়। কারও কারও ভ্রমণের কার্যক্রম থাকে অলস সময় কাটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। মূলত ব্যস্ততম জীবনে বিশ্রাম নেওয়ার জন্যই তাঁরা বেড়াতে যান। অনেকের পছন্দ অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ ভ্রমণ। প্যারাসেইলিং, বানজি জাম্পিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর কার্যক্রমে ভরপুর থাকে তাঁদের পরিকল্পনা।
কিন্তু কোন ধরনের ভ্রমণের জন্য কোন সময়টা আদর্শ, তা জানা থাকলে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা সহজ। সময় বুঝে ভ্রমণের ধরন নির্বাচন করার জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
ভ্রমণের মূল আকর্ষণ
যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন, সেখানকার মূল আকর্ষণের ওপর আপনার সময় নির্বাচন এবং পরিকল্পনার অনেকটা নির্ভর করবে। উদাহরণস্বরূপ, সিলেটের বিছনাকান্দি বা রাতারগুলে বেড়াতে গেলে জুন-জুলাই উপযুক্ত সময়। কারণ, তখন বাংলাদেশে বর্ষাকাল থাকে। এই এলাকার প্রধান আকর্ষণ হলো ঝরনা ও জলাশয়। বর্ষাকালের বৃষ্টিতে জলাশয়গুলো টইটম্বুর থাকে। সেখানে নৌকাভ্রমণ থেকে সাঁতার কাটা—নানা ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে ভ্রমণটা উপভোগ্য করা যায়।
আর যদি সাগর দেখতে যেতে চান, সে ক্ষেত্রে আদর্শ সময় হলো শীতকাল। বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এ সময় ঘূর্ণিঝড় বা অন্যান্য দুর্যোগের আশঙ্কা কম থাকে। সাগর থাকে শান্ত। সমুদ্রের বিশালতা উপভোগ করার তখনই আদর্শ সময়। একই সঙ্গে এ সময় পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণের জন্যও যথার্থ। গরমে ঘেমে যাওয়ার বা ডিহাইড্রেটেড হওয়ার আশঙ্কা নেই। দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেকিং করে পাহাড়ের চূড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
অন্যদিকে কিছু কিছু স্থানের ক্ষেত্রে রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। যেমন আপনি যদি পঞ্চগড়ে গিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে চান, যেতে হবে একেবারেই বছরের নির্ধারিত একটি সময়ে। সেটি হলো অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম দুই-তিন সপ্তাহ। রাঙামাটির সাজেকের মূল আকর্ষণ মেঘ। সেখানে যেতে হয় শরতের শুরুতে। আবহাওয়ার মর্জির ওপর ভিত্তি করেই মূলত এই পরিকল্পনাগুলো করতে হবে।
কোন ধরনের ভ্রমণ চান?
দ্বিতীয় ধ্রুবকটি হলো, আপনার কাঙ্ক্ষিত ভ্রমণের ধরন। ‘রিলাক্স’ নাকি ‘অ্যাডভেঞ্চারাস’ ট্যুর চাইছেন, সেটার ওপর আপনার ভ্রমণের জায়গা ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করে নিতে হবে। শুধু শান্তিময় একটা অবসর যাপন করতে চাইলে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যে সমৃদ্ধ এবং ভালো মানের হোটেল আছে, এমন কোনো জায়গা বেছে নিতে হবে। বাংলাদেশে রিলাক্স ট্যুরের জন্য শ্রীমঙ্গল আদর্শ জায়গা। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বেশ কিছু রিসোর্ট সেখানে রয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারের কিছু রিসোর্ট ও হোটেলও আপনার অবসর যাপনের জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
অ্যাডভেঞ্চারাস ট্যুর প্ল্যান করতে চাইলে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা এবং সুন্দরবন ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন। অনেকেই ব্যক্তিগত বাহন নিয়ে পাহাড়ি এলাকায় বেড়াতে চলে যান, এ ক্ষেত্রে ড্রাইভটা অনেক অ্যাডভেঞ্চারাস হয়। সঙ্গে ট্রেকিং এবং অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ তো থাকছেই!
সুন্দরবন ভ্রমণ সব সময়ই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে। সেখানে পদে পদে রয়েছে রোমাঞ্চের হাতছানি। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সেখানকার মৌয়ালদের সঙ্গে মধু সংগ্রহেও যেতে পারবেন আপনি।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোন সময় কোথায় ভ্রমণ-পরিকল্পনা করা উচিত, এ বিষয়ে কথা হয় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) ‘গো যায়ান’-এর পাবলিক রিলেশন ম্যানেজার শরিফ ফারজানা বুশরার সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়টায় ভ্রমণের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে সুন্দরবন। সুন্দরবনে বেড়ানোর জন্য লাক্সারি শিপ থেকে শুরু করে রিসোর্ট, সবকিছুরই ব্যবস্থা আছে। ফলে বাজেট ট্যুর বা অ্যাডভেঞ্চারাস ট্যুর এবং রিলাক্স ট্যুর—দুটি অপশনই আছে এই ডেসটিনেশনটায়।’
ফারজানা বুশরা আরও বলেন, ‘কক্সবাজার রিলাক্স ট্যুরের জন্য আদর্শ জায়গা। এখানে সারা বছরই যাওয়া যায়। সেন্ট মার্টিনও রিলাক্স ট্যুরের জন্য ভালো। আরেকটু অ্যাডভেঞ্চারাস ট্যুর চাইলে জুন-জুলাইয়ের দিকে টাঙ্গুয়ার হাওর বেছে নেওয়া যেতে পারে। সেখানে হাউসবোটেই থাকতে হয়, সেখানেই রান্নাবান্না করে খাওয়াদাওয়া করতে হয়। সব মিলিয়ে ভ্রমণপ্রেমীরা দারুণ এক অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরেন।’