চীনে আন্তর্জাতিক এআই অলিম্পিয়াডে দুটি ব্রোঞ্জ পেল বাংলাদেশ

চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এআই অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় চার সদস্যের বাংলাদেশ দলছবি: বাংলাদেশ দলের সৌজন্যে

আন্তর্জাতিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অলিম্পিয়াডের (আইওএআই) দ্বিতীয় আসরে দুটি ব্রোঞ্জপদক জিতেছে বাংলাদেশ। চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই অলিম্পিয়াডে বিশ্বের ৭৩টি দেশের ৮৬টি দল অংশ নেয়।

এবারের অলিম্পিয়াড শুরু হয় ২ আগস্ট। এরপর ৫ ও ৬ আগস্ট দুই দিনব্যাপী প্রতিযোগিতা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সমাপনী পর্বে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রিয়াসাত ইসলাম ও সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরেফিন আনোয়ার। নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিসবাহ উদ্দিন পেয়েছে ‘অনারেবল মেনশন’। চার সদস্যের দলের অপর সদস্য নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবরার শহীদ।

বেইজিং থেকে বাংলাদেশ দলের দলনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, বিশ্বমঞ্চে নিজের দেশকে সম্মানিত করতে পারার মতো আনন্দের তুলনা হয় না। অলিম্পিয়াড জগতে বাংলাদেশকে এখন সবাই চেনে, সমীহ করে। তিনি বলেন, ‘এবারের অলিম্পিয়াডে আমাদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যই সবচেয়ে ভালো করেছে। এতে বোঝা যায় যে আমাদের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।’

বাংলাদেশ দলের কনিষ্ঠ সদস্য রিয়াসাত ইসলাম বলে, ‘আইওএআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জ মেডেল পেয়ে আমি খুবই খুশি। নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করাটাই ছিল আমার কাছে সার্থকতা। এবারের প্রশ্নগুলো সহজ ছিল না, কিন্তু আমাদের চেষ্টার কারণে আমরা সমাধান করতে পেরেছি।’ আরেক সদস্য আরেফিন আনোয়ার বলে, ‘প্রথমত ভালো তো লাগছেই, মেডেল পেয়ে। এ বছর আইওএআই ছিল অন্য রকম—আয়োজন ও প্রতিযোগিতা দুটোই।’

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির উপাচার্য এ বি এম শওকত আলী বলেন, ‘পুরো বিশ্ব যেখানে এআইয়ের ওপর ভর করে চলা শুরু করেছে, সেখানে আজকের খবরটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও আনন্দদায়ক। গৌরবময় অর্জনের এই যাত্রার শুরু থেকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজি থাকতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছে।’

বাংলাদেশ এআই অলিম্পিয়াডের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রেভ চ্যাটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল হাসান প্রতিযোগীদের, তাঁদের মেন্টরসহ বাংলাদেশ এআই অলিম্পিয়াডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের কিশোরদের এই সফলতা সবাইকে উজ্জীবিত করেছে।’

এআই অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্রোঞ্জপদকজয়ী আরেফিন আনোয়ার (বাঁয়ে) ও রিয়াসাত ইসলাম
ছবি: বাংলাদেশ দলের সৌজন্যে

এই পুরস্কার বাংলাদেশের প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা জাগাবে বলে উল্লেখ করেন ডেটাসফট সিস্টেমসের প্রেসিডেন্ট এম মনজুর মাহমুদ। তিনি বলেন, এআইয়ের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তরুণদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলবে।

দলের মেন্টর ও কোচ ড‍্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম খান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশের তরুণেরা বিশ্বমঞ্চে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের লড়াইয়ে সমানতালে প্রতিযোগিতা করতে পারে।’

চলতি বছরের ১৭ মে ‘বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অলিম্পিয়াড’–এর জাতীয় পর্ব সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউবিটি)। দুই ধাপে বাছাইয়ের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে সর্বমোট ১৭১ জন শিক্ষার্থী মেশিন লার্নিং এবং ২৩৫ জন কুইজ কনটেস্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জাতীয় দল নির্বাচন করা হয়।

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক দেশে এই অলিম্পিয়াডের আয়োজক। ২০২৫ সালের আসরে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বিইউবিটি, দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান-রেভ চ্যাট, ব্রেইন স্টেশন ২৩, ইনটেলিজেন্ট মেশিনস ও ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট। পাশাপাশি, আয়োজনের পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল জনপ্রিয় কিশোর সাময়িকী ‘কিশোর আলো’ ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক সাময়িকী ‘বিজ্ঞানচিন্তা’।