ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রিভিউ শুনতে পারবেন ৬ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা বহালের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদন আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনতে পারবেন (কমপিটেন্ট) বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত দেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা বহাল রেখে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন (রিভিউ) ১৬ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন সাত বিচারপতির দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনার আবেদন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ শুনতে পারেন কি না, শুনানিতে এমন প্রশ্নে ওঠে।
এমন প্রেক্ষাপটে ১৬ নভেম্বর আপিল বিভাগ ওই প্রশ্নে জ্যেষ্ঠ আটজন আইনজীবীর মতামত শোনেন। এরপর আপিল বিভাগ এ বিষয়ে ২৩ নভেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখেন। একই সঙ্গে পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়। এর ধারাবাহিকতা আজ বিষয়টি ওঠে।
আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে আপিল বিভাগ ওই আদেশ দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও রিট আবেদনকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ উপস্থিত ছিলেন।
পরে আদেশ সম্পর্কে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, রিভিউ আবেদনটি কার্যতালিকার ১৫ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। রিভিউটা শুনতে পারবেন (ছয় সদস্যের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চ) বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে আদেশ দিয়েছেন। ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনবেন, যদিও আগে সাত সদস্যের বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন ছয়জন শুনতে পারবেন।
১৬ নভেম্বর আট জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওই প্রশ্নে মতামত তুলে ধরেছিলেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মত হচ্ছে, ছয় সদস্যের বেঞ্চ রিভিউ শুনতে পারেন। আট আইনজীবীর মধ্যে সাতজনের মতামতের মূল কথা হচ্ছে, আপিল বিভাগে এখন ছয়জন বিচারপতি আছেন, তাঁদের সমন্বয়েই ফুল বেঞ্চ। বিচারপতির সংখ্যা কোনো বিষয় নয়। কেননা, বিধিতে বেঞ্চ উল্লেখ আছে, বিচারপতির সংখ্যা উল্লেখ নেই। তাই রিভিউ শুনতে বাধা নেই। অপর এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেছিলেন, আপিল বিভাগের পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে দেওয়া আছে। এতে বিচারপতির সংখ্যা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে ১০৫ অনুচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা ও বিধান নেই। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিধিতেও বিচারপতির সংখ্যা উল্লেখ নেই। এটি নজির হয়ে থাকবে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলবে। তাই নতুন করে বিতর্ক আহ্বান করা সমীচীন নয়। এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা যেতে পারে।
সেদিন আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, প্রবীর নিয়োগী, কামরুল হক সিদ্দিকী, মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানজিব উল আলম আদালতে মতামত তুলে ধরেন।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। এর বৈধতা নিয়ে করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। একই বছরের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে আপিল খারিজ করে রায় দেন।