হাসিনা–পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন পররাষ্ট্রনীতি হওয়া উচিত
বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের বড় পৃষ্ঠপোষক ছিল ভারত। তাঁর পতন নয়াদিল্লিকে হতবাক করেছে। তবে ভারত যেহেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার, তাই ঢাকার সঙ্গে তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বাংলাদেশকেও ভারতনীতি নতুন করে সাজাতে হবে। একই সঙ্গে পরিবর্তন আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন ও মিয়ানমার ঘিরে বাংলাদেশের নীতিতে। এসব বিষয় নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক টমাস কেয়ান।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতন যে দ্রুতগতিতে হয়েছে, তা হতবাক করে দেওয়ার মতো। তবে বিক্ষুব্ধ জনতা শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে জমায়েত হওয়ার আগে দ্রুততার সঙ্গে তাঁর ভারতে চলে যাওয়াটা তেমন একটা অবাক করার মতো কিছু নয়। বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থায় যে ব্যাপক পচন ধরেছে, তা কয়েক বছর ধরেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। দেশটির যে ‘বিস্ময়জাগানো অর্থনীতি’ বহু মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে টেনে তুলেছিল, তা মলিন হতে শুরু করছিল। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে শেখ হাসিনার কারসাজি, ব্যক্তিস্বাধীনতার লাগাম টেনে ধরা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে তোলা নিয়ে জন–অসন্তোষ দিন দিন বেড়েই চলছিল।
বাংলাদেশে অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্যে এমন এক সম্পর্ক রয়েছে, যা আলাদা করা সম্ভব নয়। দেশটিতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা অর্থনীতির ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন অজনপ্রিয় হয়ে ওঠা এক স্বৈরশাসককে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল, তাদের স্বার্থেই এই দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। সেই নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে মানুষের মধ্যে যে অসন্তোষ, তা আড়ালে নিয়ে যেতে পারেনি ওই নির্বাচন।
ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে শেখ হাসিনাকে নিয়ে চীনের হতাশা বাড়ছিল। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টপকে মোংলা বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও তিস্তা বাঁধ নির্মাণের মতো বড় কিছু প্রকল্পের কাজ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে অজনপ্রিয় কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে গত ১ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সরকার যে পতনের দিকে এগোচ্ছে, সে বিষয়ে তখনো তেমন একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলন ধীরে ধীরে গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। ডাক দেওয়া হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগের। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের দৃঢ়সংকল্প এবং শেখ হাসিনার দম্ভ তাঁর সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামায়।
এরপর দ্রুত সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতি ও ছাত্রনেতাদের মধ্যে বৈঠকের পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের নেতৃত্বে থাকা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আন্দোলনকারীরাই পছন্দ করে বেছে নিয়েছেন। তিনি একজন নির্দলীয় ব্যক্তিত্ব। সততার জন্যও ব্যাপক হারে প্রশংসিত। যে মানুষটি ক্ষুদ্রঋণ–সংক্রান্ত উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকার জন্য ‘দরিদ্রের ব্যাংকার’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, যাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে শেখ হাসিনা বহু অভিযোগ এনেছিলেন, সেই ড. ইউনূসের জন্য এই ঘুরে দাঁড়ানো বেশ চমকপ্রদ।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে দেশটির ভেতরে এখন একধরনের অস্থিরতা রয়েছে। ড. ইউনূস যে আবার অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনবেন, এমন আশাও করছেন অনেকে। একই সঙ্গে তাঁদের প্রত্যাশা—দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং আরেকজন স্বৈরশাসকের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ঠেকাতে রাজনৈতিক সংস্কার আসবে নোবেলজয়ী এই ব্যক্তির নেতৃত্বে। এটি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে টেকনোক্র্যাট—সব ধরনের মানুষকে নিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে, তাকে একটি অসাধারণ প্রথম পদক্ষেপ বলা চলে।
অন্তর্বর্তী সরকার অস্থায়ী, ৯০ দিনের মধ্যে তাদের নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপরও ব্যাপক একটা প্রত্যাশা রয়েছে যে—৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূসকে আরও সময় দিতে একটি সমাধান খুঁজে বের করা হবে, যেন তিনি অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনার কাজ করতে পারেন। সার্বিক যে ঐকমত্য হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে ড. ইউনূস অন্তত এক বছর ক্ষমতায় থাকবেন। তা দুই বছরও হতে পারে। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে মেয়াদ এমনভাবে বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তা সরকারের বৈধতাকে সুরক্ষিত রাখে, একই সঙ্গে সংস্কারের যে লক্ষ্যে তারা কাজ করছে, তা পূরণ হয়।
সরকারি দায়িত্ব পালনকালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে সামলানোর মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন তিনি। নিজেদের দাবিদাওয়া পূরণে চাপ দিতে রাজপথে নামার সক্ষমতা রয়েছে দুই দলেরই। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের সন্তুষ্ট রাখতে হবে তাঁকে। ড. ইউনূসের প্রথম এবং সবচেয়ে জরুরি কাজ হবে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যালঘু হিন্দুসহ অন্যদের ওপর প্রতিহিংসামূলক হামলা বন্ধ করা।
সার্বিক যে ঐকমত্য হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে ড. ইউনূস অন্তত এক বছর ক্ষমতায় থাকবেন। তা দুই বছরও হতে পারে। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে মেয়াদ এমনভাবে বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তা সরকারের বৈধতাকে সুরক্ষিত রাখে, একই সঙ্গে সংস্কারের যে লক্ষ্যে তারা কাজ করছে, তা পূরণ হয়।
বিতর্ক থাকলেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অংশীদারত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো প্রভাবশালী এই প্রতিবেশী দেশটিকে হতবাক করে দিয়েছে। গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক ছিল নয়াদিল্লি। আন্দোলনকারীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হবে না—সেনাবাহিনী এটা স্পষ্ট করার পর, তিনি এই ভারতেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। বাংলাদেশে অজনপ্রিয় এই নেতার প্রতি এককাট্টা সমর্থন দিতে এরই মধ্যে নয়াদিল্লিকে কৌশলগতভাবে কিছু মূল্য দিতে হয়েছে। সেগুলো হলো ব্যর্থ একটি সরকারের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়েছে তারা, আর বাংলাদেশে আগে থেকেই যে ভারতবিরোধী মনোভাব ছিল, তা আরও বেড়ে গেছে।
শেখ হাসিনার পতনের পেছনে বিদেশি হস্তক্ষেপ আছে বলে অভিযোগ করেছেন ভারতের অনেক বিশ্লেষক। এমনকি অনেকেই দাবি করেছেন—ভূরাজনৈতিক কারণে এই ‘অভ্যুত্থানকে উসকে’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তথ্যপ্রমাণ বলছে, এই দাবি সত্য নয়। চীনের উত্থানের কারণে বাংলাদেশ যখন ভূরাজনৈতিকভাবে একধরনের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, তখন শেখ হাসিনা বলতে গেলে নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষা করেছেন।
পশ্চিমা দেশগুলো শেখ হাসিনা সরকারের গণতান্ত্রিক বিচ্যুতি, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো উপেক্ষা করে গেছে। বাংলাদেশে অনেকে এ কথাও বলে থাকেন—এর মাধ্যমে দেশগুলো শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী মনোভাবের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়েছে। কারণ, তাদের নীরবতা হাসিনাকে আরও সাহসী করে তুলেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ৯০ দিনের বেশি ক্ষমতায় থাকবে, তা ধরে নিয়ে বলা যায়, শেখ হাসিনার চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বেশি নিরপেক্ষ অংশীদার হিসেবে পাবে পশ্চিমারা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। আর তিনি যদি কৌশলগত বা অর্থনৈতিক সমর্থন চেয়ে যৌক্তিক কোনো আবেদন করেন, তা দাতারা ফিরিয়ে দেবেন—এমনটা চিন্তা করাও কঠিন।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখাটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশটিতে তৈরি পোশাকের বড় দুই ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। এই খাত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে। একই সময়ে পশ্চিমাদের ওপর খুব বেশি নির্ভর করা থেকে ড. ইউনূস বিরত থাকবেন বলেও মনে হচ্ছে। যে শেখ হাসিনা ড. ইউনূসকে শিকারে পরিণত করেছিলেন, তাঁকে ঠেকাতে পশ্চিমাদের ব্যর্থতায় তাঁর মনে অসন্তোষ থাকতে পারে।
এর অর্থ হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি নিজ অঞ্চলেও সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিতে পারে ঢাকা। চীন ও জাপানের মতো যেসব উন্নয়ন অংশীদার বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করেছে, তারা এ পরিস্থিতি থেকে লাভবান হতে পারে। বিশেষ করে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে শেখ হাসিনাকে নিয়ে চীনের হতাশা বাড়ছিল। চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে টপকে মোংলা বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও তিস্তা বাঁধ নির্মাণের মতো বড় কিছু প্রকল্পের কাজ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
গত জুলাইয়ে শেখ হাসিনা যখন চীন সফরে গিয়েছিলেন, তখন বেইজিংয়ের এই অসন্তোষ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর্থিক সহায়তা হিসেবে চীনের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার যে আশা নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন, তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ছিল মূলত নিজ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার একটি হাতিয়ার।
যা–ই হোক, ভৌগোলিক অবস্থান থেকে এটাই বোঝা যায়, ভারত এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবেই থাকবে। ঢাকার নতুন বাস্তবতা সম্পর্কে নয়াদিল্লি যখন বুঝতে পারবে, তখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে না নেওয়ার কোনো কারণই থাকবে না তাদের কাছে। এই বোঝাপড়ার প্রক্রিয়াকে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের বাইরে গিয়ে অন্যান্য শক্তি যেমন—অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হতে হবে ভারতকে। ভবিষ্যৎ নির্বাচনে বিএনপিই জয় পাবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে।
অবশ্য বিএনপিকে নিজেদের স্বার্থবিরোধী হিসেবে দেখে ভারত, তারপরও নয়াদিল্লির সঙ্গে দলটি বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে চায় বলেই মনে হচ্ছে। এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনের আগেও দিল্লির কাছে ধরনা দিয়েছিল তারা। বোঝাতে চেয়েছিল—ভারতের জন্য বিএনপি কোনো হুমকি নয়। নির্বাচনের ফলাফল যা–ই হোক না কেন, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের বাইরেও প্রভাব ধরে রাখতে বিএনপির সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক ভারতকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে।
সবশেষে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের একটি হবে মিয়ানমার। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের বেশির ভাগ অঞ্চল দখল করে রেখেছে আরাকান আর্মি। অঞ্চলগুলোর মধ্যে রাখাইন রাজ্যও রয়েছে।
২০১৬–১৭ সালে সেখান থেকেই লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। শেখ হাসিনার সরকারের সময় মিয়ানমারের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ঘনিষ্ঠ নজর রাখত ঢাকা। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নেপিডোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
জরুরিভাবে বাংলাদেশের নীতি প্রণয়ন করা দরকার। এই নীতি এমন হতে হবে, যেন মিয়ানমারে গত তিন বছরে যে পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো প্রতিফলিত হয়। আরও জরুরি বিষয় হলো, বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে একটি মানবিক সংকট দানা বাঁধছে, যার সমাধান করা না গেলে আবারও বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে পারে।
শেখ হাসিনাকে যেদিন পদত্যাগে বাধ্য করা হলো, সেই ৫ আগস্ট মংডু শহরে হামলা চালিয়েছিল আরাকান আর্মি। রাখাইন রাজ্যে এটিই সামরিক সরকারের শেষ ঘাঁটি। সেদিনের হামলায় শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি আরাকান আর্মির সঙ্গে বৃহত্তর পরিসরে সম্পৃক্ততার পক্ষে কথা বলেছেন। এটি বাংলাদেশের মিয়ানমার–সংক্রান্ত নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ছিল মূলত নিজ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার একটি হাতিয়ার। কৌশলে তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের নিয়মিত একে–অপরের বিরুদ্ধে নামাতেন। তবে এখন ড. ইউনূসের সামনে সুযোগ এসেছে, এমন নীতিতে এগিয়ে চলার, যা বাংলাদেশের স্বার্থে কাজে লাগবে, কোনো একটি দল বা ব্যক্তির নয়।