‘বাবা আর আসবে না, মা ডাকবে না’
‘বাবা কি আর আমাদের কাছে আসবে না। ঘরে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে মা বলে ডাকবে না আমাকে। আর কে আমাকে আদর করবে?’ এভাবেই বিলাপ করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছে নাইসা জান্নাত (৮)। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ হোসেনের (৩০) বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে আছে স্বজনদের আহাজারিতে।
মোহাম্মদ হোসেন পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। মানুষের ঘরবাড়ি নির্মাণের কাজ করতেন তিনি। কিন্তু তার নিজের ঘরটি এখনো নির্মাণাধীন। সেমিপাকা টিনশেড ঘরের জানালা লাগানো হয়নি। বাইরের দেয়ালে করা হয়নি প্লাস্টার। সব কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বড় ভাই মোহাম্মদ ফিরোজকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসার জন্য টেকনাফ থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন মোহাম্মদ হোসেন। গত শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে ফেরার পথে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বসন্তপুর এলাকায় রিলাক্স পরিবহনের বাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। সড়কের পাশে খাদে উল্টে পড়ে বাসের পাঁচজন যাত্রী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে টেকনাফের মোহাম্মদ হোসেনও ছিলেন। তাঁর ভাই মোহাম্মদ ফিরোজ কোমরে আঘাত পান। তিনি বলেন, চালকের চোখে ঘুম থাকায় তিনি বাসের নিয়ন্ত্রণ হারান।
পাঁচ বোন ও ছয় ভাইয়ের মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন ছিলেন সবার ছোট। কয়েক বছর আগে সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়াপাড়া গ্রামের জুহুরা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন তিনি। নাইসা জান্নাত ও সাইফ আলী (৪) নামের দুই সন্তান রয়েছে তাদের। রাত নয়টার দিকে কুমিল্লা থেকে মোহাম্মদ হোসেনের মরদেহ আনা হয় টেকনাফের কচুবনিয়ায় নিজ গ্রামে।
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জুহুরা ইয়াসমিন বলেন, ‘দুই অবুঝ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমি কোথায় যাব এখন? রাতে গাড়িতে ওঠার আগে মুঠোফোনে শেষ কথা হয় তার সঙ্গে। সকালে দেখা হবে বলেছিল। কিন্তু তার দেখা এভাবে হবে, সেটা মেনে নিতে পারছি না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, কুমিল্লায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ হোসেনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে টেকনাফের গ্রামে বাড়িতে নিহত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।