বন্য হাতি ও মহিষের আক্রমণে ৪ মৃত্যু, আগুনে ক্ষতি ১৫১ কোটি টাকার

বন্য হাতিফাইল ছবি

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের ২১টি জেলায় ১ হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এতে প্রায় ১৫১ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, বছরের প্রথম মাসে বন্য মহিষ ও হাতির আক্রমণে দুই জেলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণকারী গবেষণা সংস্থা ‘নিরাপদ’-এর এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সমীক্ষাটি মূলত দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার খবর এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তাতে নৌকাডুবি, কোভিড-১৯, শৈত্যপ্রবাহ, ডেঙ্গু, অগ্নিকাণ্ড, নদীভাঙন ও বন্য প্রাণীর আক্রমণকে দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, এসব দুর্ঘটনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি নয়জনের আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের নানা ঘটনায় আহত হয়েছেন ছয়জন। আগুনের পর মৃত্যুর দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে নৌকাডুবি। জানুয়ারিতে ছয়টি জেলায় এ দুর্ঘটনায় সাতজন মারা গেছেন। চারজন এখনো নিখোঁজ। নড়াইল, শেরপুর, চাঁদপুর, কুড়িগ্রাম, বরিশাল ও নেত্রকোনায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

জানুয়ারি মাসজুড়ে দেশের ২৭টি জেলায় ৩৪১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এ সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ জন। একই সময়ে ৫৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্য ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশে সাধারণত মে মাসে নদীভাঙন শুরু হয়। কিন্তু চলতি বছরে জানুয়ারি মাসে জামালপুর, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জের পাঁচটি এলাকায় নদীভাঙন হয়েছে। এতে ৯৮৮ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওই জমির সঙ্গে ৫০টি বাড়ি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিপণিবিতান ও কৃষিজমি নদীতে হারিয়ে গেছে।

এদিকে, জানুয়ারিতে দেশের তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে কম। এ মাসে ৪১টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। ৬ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত ছিল। এরপর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তবে শীতের কারণে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

অন্যদিকে, কুড়িগ্রামের সীমান্তসংলগ্ন রাজিবপুর উপজেলায় গত ১০ জানুয়ারি বন্য হাতি আক্রমণ করে। এতে তিন গ্রামের ২০০ ডেসিমেল ভুট্টা ও ৫০ ডেসিমেল শালগমখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় একদল বুনো মহিষের আক্রমণে তিনজনের মৃত্যু হয় এবং সাতজন আহত হন। পরের দিন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বন্য হাতির আক্রমণে একজনের মৃত্যু হয়।

বন্য প্রাণীর আক্রমণে মৃত্যুর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণীবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ড টিমের প্রধান নির্বাহী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় অংশের বেশির ভাগ এলাকায় বনভূমি রয়েছে। ফলে, সেখান থেকে হাতিসহ নানা বন্য প্রাণী আসবে—এটাই স্বাভাবিক। দেশের ভূখণ্ডেও বনভূমি ছিল। সেগুলো নানা কারণে ধ্বংস হয়েছে। আর হাতির বিচরণ আছে—এমন এলাকাগুলোয় ধান-ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে। যে কারণে শীতের শেষের দিকে ফসল পাকা শুরু হলে হাতি তা খেতে আসে। তখন মানুষ ফসল রক্ষার জন্য এবং আতঙ্কিত হয়ে সেগুলোর ওপর আক্রমণ করে।

হাতির জন্য সীমান্ত এলাকায় বন সৃজন করলে এ সমস্যা হতো না বলে মনে করেন অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম।  

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাতিকে ধাওয়া দিলে তারাও উল্টো আক্রমণ করে। এ কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। হাতির আক্রমণে যেসব কৃষকের ফসলি জমির ক্ষতি হয়, সরকার যদি তাঁদের সহায়তা দেয়, তাহলে ওই কৃষক হাতির ওপর আক্রমণ চালাবেন না।

হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তার বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন লাগার পরে আমরা সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দিই। বন্য প্রাণীর আক্রমণে হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বন বিভাগ দেখে। তবে হাতির আক্রমণে ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব।’