ঢাকায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার
ছবি: ব্রিফিংয়ের ভিডিও থেকে নেওয়া

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের করা এক মন্তব্যের বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়াকে উদ্দেশ্য করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, যে দেশ প্রতিবেশী দেশে আগ্রাসন চালায়, তার মুখে অন্যের হস্তক্ষেপ নিয়ে কথা বলা মানায় না।

গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি যান হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। সেখানে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। পরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিনিধিদল নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তাঁরা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।

আরও পড়ুন

লাভরভ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপের পরও বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে চলেছে, যা প্রশংসনীয়। এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি পরিস্থিতি বিবেচনা করি, তাহলে দেখব ভারত মহাসাগরীয় কৌশলের নামে তাদের লক্ষ্য চীনকে প্রতিহত ও রাশিয়াকে একঘরে করে ফেলা, যা কার্যত বৈশ্বিক পরিসরে ন্যাটোর সম্প্রসারণেরই অংশ।’

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগমুহূর্তে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেন। ঢাকায় তিনি বলেন, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো কর্তৃত্বমূলক আদেশ ও হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে মস্কো প্রতিহত করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের নামে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে আসতে চায়। তারা এখানে এসে এই অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’ এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?’

আরও পড়ুন

জবাবে মিলার বলেন, ‘রাশিয়ার প্রতি সম্মান রেখে বলব, তারা এমন একটি দেশ, যারা দুই প্রতিবেশী দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে। তারা আগ্রাসী যুদ্ধ চালাচ্ছে। স্কুল, হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনে তারা নিয়মিত বোমা হামলা চালাচ্ছে। অন্য দেশের নির্দেশনা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তাদের কথা বলা উচিত নয়। বাস্তবিক অর্থে এটা সের্গেই লাভরভের করা সুচিন্তিত মন্তব্য নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সম্পর্কে বলব, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয়ের লক্ষ্য একটি অবাধ, মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও প্রাণবন্ত ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তোলো। এটাই আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের উদ্দেশ্য। এটাই আমাদের অবস্থান।’

ব্রিফিংয়ে আরেক প্রশ্নে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো বিবৃতি আমরা দেখিনি।’

জবাবে মিলার আরও বলেন, ‘আমার জানামতে, যেসব নেতার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে হোয়াইট হাউস থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন

ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়, ‘আদালত দুই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। নিউইয়র্কে নির্বাসিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? সরকার কি সাংবাদিক, প্রতিবেদক ও জ্যেষ্ঠ সম্পাদকদের হয়রানি করছে?’

জবাবে মিলার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যেমনটি আমরা আগে বেশ কয়েকবার বলেছি, যেকোনো গণতন্ত্রে সাংবাদিকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের কাজ দুর্নীতি উন্মোচন করা। জনগণের প্রতিদিনের জীবনকে প্রভাবিত করে—এমন তথ্য জানার অধিকার তাঁরা নিশ্চিত করেন। জনগণ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হন, সে সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করতে সাংবাদিকদের সুযোগ দিতে হবে। আপনারা এখানে যেমন প্রতিদিন আমার কাছ থেকে জবাবদিহি আদায় করেন, ঠিক একইভাবে সাংবাদিকদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি আদায় নিশ্চিতের সুযোগ দিতে হবে। তাঁদের অবশ্যই হয়রানি, সহিংসতা বা ভয়ভীতি ছাড়া কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। সরকারকে জবাবদিহি রাখার লক্ষ্যে কাজ করা সাংবাদিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের পদ্ধতিগত ও নিপীড়নমূলক আচরণে আমরা উদ্বিগ্ন।’