আক্রান্ত গাছের পরিচর্যা করার অঙ্গীকার আওয়ামী লীগ নেতার

শাহরিয়ার আলম নিজের আমগাছগুলো দ্রুত বড় করে তোলার জন্য সড়কের পাশের তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাগমারার মাথাভাঙ্গা-হাটগাঙ্গোপাড়া বাইগাছা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় বাকল তুলে যে তালগাছগুলোতে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেই গাছগুলোর পরিচর্যা করবেন বলে আদালতে অঙ্গীকার করেছেন শাহরিয়ার আলম। তিনি উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা।

আজ মঙ্গলবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে লিখিতভাবে এই অঙ্গীকার দাখিল করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আগামী ১৮ মে রায়ের জন্য তারিখ রেখেছেন।

এর আগে শুনানিতে শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহরিয়ার আলমের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মক্কেলের হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, শাহরিয়ার আলম আক্রান্ত গাছগুলো পরিচর্যা করবেন বলে অঙ্গীকার করছেন। পাশাপাশি আদালত যে আদেশ দেবেন, তা মেনে চলবেন।  

আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘উনাকে যত্ন করতে হবে কেন এই গাছের? এই গাছের যত্ন করার জন্য বাংলাদেশে অনেক মানুষই আছে। নিজের পরিবার তাঁর (শাহরিয়ার) কাছে নিরাপদ কি না, আগে দেখেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁর মাধ্যমে নিরাপদ কি না, তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন। তালগাছের যত্ন করা তো দূরের কথা।’ একপর্যায়ে আইনজীবী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। তখন আদালত বলেন, এ ধরনের স্টেটমেন্ট (বক্তব্য) এখানে দেখা যাচ্ছে না।

রাজশাহীর বাগমারায় উপজেলার সড়কের বাইগাছা এলাকায় নিজের পুকুরপাড়ে আমগাছ লাগিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলম। পুকুরটি মূলত মাথাভাঙ্গা-হাটগাঙ্গোপাড়া সড়কঘেঁষা। ওই সড়কের পাশে আগে থেকেই তালগাছ লাগানো ছিল। এসব তালগাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছগুলো ঠিকমতো বেড়ে উঠছে না। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নিজের গাছগুলো দ্রুত বড় করে তোলার জন্য তালগাছের বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম। এতে সড়কের পাশে থাকা অন্তত ৫০টি তালগাছ মরতে বসেছে।  

এ নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে ‘সড়কের পাশের অর্ধশত তালগাছ মারতে বাকল তুলে কীটনাশক প্রয়োগ করলেন আ.লীগ নেতা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ৩১ জানুয়ারি ‘৫০ তালগাছে কীটনাশক: দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে প্রথম আলোয় সম্পাদকীয় ছাপা হয়। এটি নজরে আসার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে শাহরিয়ার আলমকে ১২ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরেজমিনে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন নিয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে একই দিন আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়।

ধার্য তারিখে শাহরিয়ার আলম আদালতে হাজির হন। বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রাজ্জাকও প্রতিবেদন দাখিল করেন। কৃষি কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভাষ্য, আমগাছ বাড়াতে প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য তালগাছগুলোতে ক্ষত সৃষ্টি করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মারার অপচেষ্টা হয়েছে। তালগাছ রক্ষার্থে তাঁর (শাহরিয়ার আলম) কোনো উদ্যোগ ও আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হয়নি। তালগাছগুলোর ক্ষতি করার পেছনে তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে শাহরিয়ার জড়িত মর্মে কৃষি কর্মকর্তা মনে করেন।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে ঘটনায় সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে শাহরিয়ারের পক্ষ থেকে শুনানিতে দাবি করা হয়, বিদ্বেষপ্রসূত ঘটনাটি প্রচারিত হয়েছে।

ওই ঘটনায় নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের ভাষ্য, রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছ বিনষ্টে শাহরিয়ার আলম ও তাঁর লোক জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে পরিলক্ষিত হয়। তথ্য সংগ্রহ, প্রতিবেদন তৈরি এবং পরবর্তী ঘটনা নিয়ে প্রথম আলোর বাগমারা প্রতিনিধি মামুনুর রশীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। প্রথম আলোর সম্পাদকের পক্ষে প্রতিবেদনের সত্যতা বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। শুনানি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালত ৪ এপ্রিল শুনানির জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।  

ওই ঘটনায় করা মামলার অগ্রগতি জানিয়ে আজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন বাগমারা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম। এ সময় আদালত বলেন, ‘অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন?’ তখন ওসি বলেন, ‘জি, মাই লর্ড।’

রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস-আল-হারুনী ও মাহফুজা বেগম শুনানিতে ছিলেন। শুনানির সময় শাহরিয়ার আলম আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।