রানা প্লাজা ধসের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে হবে

ব্লাস্টের উদ্যোগে ‘রানা প্লাজা ভবন ধস: ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ১১ বছর’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২৩ এপ্রিলছবি: সংগৃহীত

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় করা হত্যা মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ১১ বছর পরও এ ঘটনার মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং মামলাগুলোকে স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে।

 আজ মঙ্গলবার বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রানা প্লাজা ভবন ধস: ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ১১ বছর’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

উল্লেখ্য, ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় পুলিশের করা মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে গত ১৫ জানুয়ারি বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

আজকের সেমিনারে বিচার বিলম্বের বিষয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) বিমল সমাদ্দার বলেন, কয়েকজন আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় দীর্ঘদিন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ছিল। এক বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। হত্যা মামলার মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৫৯৬। এর মধ্যে ৮৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

 সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে পিপি বিমল বলেন, রানা প্লাজা ধসে পঙ্গুত্ব বরণ করা শ্রমিকেরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা নিয়ে তাঁদের দুর্দশার কথা বিচারককে বলছেন। সাক্ষ্য দেওয়ার পর তাঁরা যাতায়াতভাড়াও চান। কারণ, তাঁদের যাতায়াতভাড়া থাকে না। প্রত্যেকে কষ্টে রয়েছেন।

আরও পড়ুন

সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে পিপি বিমল বলেন, রানা প্লাজা ধসে পঙ্গুত্ব বরণ করা শ্রমিকেরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা নিয়ে তাঁদের দুর্দশার কথা বিচারককে বলছেন। সাক্ষ্য দেওয়ার পর তাঁরা যাতায়াতভাড়াও চান। কারণ, তাঁদের যাতায়াতভাড়া থাকে না। প্রত্যেকে কষ্টে রয়েছেন।

 অবশ্য সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, একটি মামলায় সব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ নেওয়ার দরকার পড়ে না। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য নিয়ে আদালত রায় ঘোষণা করতে পারেন।

 ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা আশা করি, রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্তির আগেই খুনের মামলার বিচার শেষ হবে।’

 রানা প্লাজা ধসে পঙ্গুত্ব বরণ করা পোশাকশ্রমিক নিলুফা বেগম ও শিলা বেগম বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায় থেকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ তাঁরা পাননি। বরং শারীরিক নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

 ব্লাস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রানা প্লাজা ধসে মারা যান ১ হাজার ১৩৫ জন। আর পঙ্গুত্ব বরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করা প্রত্যেক শ্রমিককে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গঠন করতে হবে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল। তৈরি করতে হবে একটি জাতীয় মানদণ্ড।

 বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর বহু শ্রমিকের জীবন–সংসার তছনছ হয়েছে। অনেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করা শ্রমিকেরা অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তাঁরা। ভুক্তভোগীদের পাশে থাকা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

শ্রমিকনেত্রী তসলিমা আক্তার বলেন, ‘তাজরীনের মালিক জামিনে মুক্ত দেলোয়ার হোসেন পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি এখন মৎস্য লীগের নেতা। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ছাড়া ওই ভবনের বিভিন্ন গার্মেন্টসের মালিক যারা আসামি তাঁরা কিন্তু জামিনে। আমাদের দেশে দেখছি, অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে। আবার অনেক মামলা দিনের পর দিন ঝুলে থাকছে। এটা রাজনীতির বাইরে হচ্ছে বলে মনে করি না।’

 সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অনীক আর হক, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহসিন মজুমদার, ট্রাস্ট ফর ইনজিউরড ওয়ার্কারস মেডিকেল কেয়ার ইনক্লুডিং রানা প্লাজা ওয়ার্কারসের সমন্বয়ক মো. শাহরিয়ার রনি প্রমুখ।