সীতাকুণ্ডের ওই অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালাতেন দুজন ডিপ্লোমাধারী

শিল্প–কারখানায় দুর্ঘটনা রোধে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে আজ সোমবার মতবিনিময় সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টটি চলত দুজন ডিপ্লোমাধারী ও মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা এক কর্মকর্তার মাধ্যমে। সেখানে দক্ষ জনবলের অভাব ছিল। প্ল্যান্টের অপারেটর ছিলেন ডিপ্লোমাধারী। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় দক্ষ জনবলসংকটের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন উদ্দিন।

চট্টগ্রাম জেলার ভারী ও মাঝারি শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এ সভায় চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশের সদস্য, জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

সভায় বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হন সীমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, সব ধরনের লাইসেন্স নিয়ে তাঁরা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। ঠিক কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো তাঁরা জানেন না। ওখানে বিকেলের পালায় ১৪ থেকে ১৫ জন কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে অপারেটর ছিলেন তিনজন, বাকিরা ফিলিংম্যান ও শ্রমিক।

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে আশপাশের অন্তত দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। শনিবার বিকেলে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রশাসকের এক প্রশ্নের জবাবে মো. মামুন উদ্দিন বলেন, তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। জেলা প্রশাসক প্রশ্ন করেন, কারখানায় যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের কারও প্রকৌশলবিদ্যার দক্ষতা ও একাডেমিক জ্ঞান কি রয়েছে? জবাবে মো. মামুন উদ্দিন বলেন, যিনি অপারেটর আছেন, তিনি ডিপ্লোমাধারী। তাঁরা ২৭ বছর ধরে প্ল্যান্টটি চালাচ্ছেন।

গত শনিবার বিকেলে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের কারখানা সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে ওই বিস্ফোরণে। লোহার পাত উড়ে গিয়ে পড়েছে অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে। এ ঘটনার পর শিল্পকারখানায় দুর্ঘটনা রোধে মহাপরিকল্পনা তৈরির করার উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসন মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সোলায়মান মামুন উদ্দিনের কাছে জানতে চেয়ে বলেন, ‘প্ল্যান্টটি চীন থেকে ইমপোর্ট করা। ইনস্টলেশনের পর চায়নিজ বিশেষজ্ঞরা কি আর কখনো এসেছিলেন? আপনারা কীভাবে মাত্র দুজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এবং মানবিক থেকে পাস করা একজন স্টুডেন্ট (সুপারভাইজার) দিয়ে একটা অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালাচ্ছিলেন?’

জবাবে মো. মামুন উদ্দিন বলেন, চীন থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে তিন মাস অবস্থান করে প্ল্যান্ট চালু করে দেন। এরপর আরও দুই মাস ছিলেন। এরপর আর আসেননি। আর ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা ২০ বছর ধরে চালাচ্ছিলেন। মো. সোলায়মান আবার জিজ্ঞেস করেন, মানবিক থেকে পাস করা কেউ কি এসব টেকনিক্যাল বিষয়ে জ্ঞান রাখেন?

সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের মালিকানা প্রতিষ্ঠান সীমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন উদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো

এরপর জেলা প্রশাসক মো. মামুন উদ্দিনের কাছে জানতে চান, কারখানায় কার্বন ডাই–অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। এসব সিলিন্ডার রাখার অনুমোদন ছিল না। এসব কীভাবে সেখানে এল? জবাবে মো. মামুন উদ্দিন বলেন, এসব রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছিল।

সীমা অক্সিজেন লিমিটেড গত বছর পরিদর্শন করেছেন বলে সভায় জানান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন চট্টগ্রামের উপমহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাকিব। তিনি বলেন, ‘পরিদর্শন করে আমরা অনেকগুলো সমস্যা পেয়েছিলাম। তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে পরিদর্শন করে চিঠি দেওয়া হয়।

তাঁরা কিছু বিষয়ে সংশোধন করেছেন। আর কিছু সংশোধন করতে তিন মাস সময় চেয়েছিলেন। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে ফলোআপ পরিদর্শন করার কথা ছিল। এ ছাড়া পরিদর্শনে সীমা রি–রোলিং মিলেও কিছু ফল্ট পাওয়া গিয়েছিল। তিন মাস আগে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। চিঠির সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় আদালতে মামলা করি।’ আবদুল্লাহ আল সাকিব জানান, প্রতিষ্ঠানটি সবকিছু আইনানুগ করবে বলে জরিমানা দিয়ে আদালত থেকে মামলার নিষ্পত্তি করেছিল।