ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা আপাতত চলাচল করতে পারবে
ঢাকা মহানগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা আপাতত চলতে পারবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ বা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই বিষয়বস্তুর ওপর এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে এ–সংক্রান্ত রুল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে সরকারপক্ষের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ আদেশ দেন। ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন রিকশা মালিক জোটের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন আলী আবেদনকারী হয়ে গত ২৭ অক্টোবর রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ১৯ নভেম্বর রুলসহ আদেশ দেন।
এ আদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে সরকারপক্ষ রোববার আবেদন করে, যা সোমবার চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এইচ এম সানজীদ সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তাহসিনা তাসনিম। আদালতের অনুমতি নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানিতে অংশ নেন।
আদেশের পর আইনজীবী এইচ এম সানজীদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের বিষয়বস্তুর ওপর এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন চেম্বার আদালত। এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা আপাতত থাকছে না। এতে ঢাকা মহানগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা আপাতত চলাচল করতে পারবে।’
এর আগে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.আসাদুজ্জামান বলেন, হাইকোর্ট তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে দিতে বললেন। এখানে কয়েক লাখ পরিবার তাঁদের ওপর নির্ভরশীল। বিষয়টি এখন জনস্বার্থে ও জনগুরুত্বে পরিণত হয়েছে। কেননা, অসংখ্য মানুষ খাদ্য ও আশ্রয়ের অধিকারসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। রিটে তাঁদের (রিকশামালিক-চালক) পক্ষও করা হয়নি। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়ে হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য নির্দেশনার আরজি জানান তিনি।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী এইচ এম সানজীদ সিদ্দিকী বলেন, অযান্ত্রিক (প্যাডেল–চালিত) রিকশা চলতে হলে সিটি করপোরেশন থেকে রেজিস্ট্রেশন ও চালকদের লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্সের কোনো শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে জরিমানারও বিধান আছে। গত তিন মাস ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো যেভাবে চলছে, তাতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এই বাহনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। তাদের জন্য নীতি বা বিধিমালা নেই। প্যাডেলচালিত রিকশার জন্য আইন থাকলেও ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে তা না থাকা ও প্রযোজ্য না হওয়া বৈষম্যমূলক।
ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে বা বিধিনিষেধ আরোপে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। এসব অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।