সংসদ সদস্যপুত্রের ‘মার’ খেয়েও পুলিশ বলল ভুল–বোঝাবুঝি

বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে পুলিশের গাড়িতে ধাক্কা এবং পুলিশ সদস্যদের মারধর করার পর এমপিপুত্র ইন্তেশার চৌধুরী ও তাঁর বান্ধবীকে গুলশান–২ কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগ কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কমিউনিটি ব্যাংকের বুথে বসিয়ে রাখা হয়
ছবি: সংগৃহীত

রাত তখন সাড়ে ১০টা। গুলশান–২ কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগ কার্যালয়ের ফটক। বনানীর দিক থেকে আসা একটি জিপ ধাক্কা দিল ট্রাফিক পুলিশের একটি গাড়িকে। ফটকের সামনে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এলেন। আটক করা হলো গাড়িটি। তখন গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন এক যুবক, যিনি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মারধর শুরু করেন ওই যুবক। এ সময় পুলিশ সদস্যরাও তাঁর ওপর চড়াও হয়। শনিবার রাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের ব্যস্ত সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশকে মারধর করা ওই যুবকের নাম ইন্তেশার চৌধুরী। তিনি ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর ছোট ছেলে। পুলিশের গুলশান বিভাগের সদস্যদের ভাষ্য, এটা ভুল–বোঝাবুঝি ছিল। ঘটনাস্থলেই মীমাংসা হয়ে গেছে।

তবে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে অন্য চিত্র। মারধর করার দায়ে পুলিশ সদস্যরা প্রথমে ইন্তেশারকে আটক করেন। ওই সময় গাড়িতে তাঁর সঙ্গে এক বান্ধবী ছিলেন। প্রথমে তাঁদের কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগ কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কমিউনিটি ব্যাংকের বুথে বসিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে পুলিশ গুলশান থানাকে ঘটনা অবহিত করে বার্তা পাঠায়। থানা থেকে গুলশানের ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বশিরুল ইসলামকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি গিয়ে ইন্তেশারকে গুলশান থানায় নিয়ে যান।

ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর ছেলে ইন্তেশার চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পরিচয় জানার আগে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মামলার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু পরিচয় জানার পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তাঁরা। তবে রাতভর গুলশান থানায় বসিয়ে রাখা হয় ইন্তেশারকে। তাঁর বান্ধবীকে মধ্যরাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রো–ঘ ২১৫৭৩০ নম্বরের ওই গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন ইন্তেশার চৌধুরী। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁর গাড়িটি ট্রাফিক পুলিশের গাড়িকে ধাক্কা দেয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, ইন্তেশার চৌধুরীকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়। পরে সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর গাড়িচালক আরিফের জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুচলেকা দিয়ে গুলশান থানা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে চলে যান ইন্তেশার চৌধুরী।

গাড়িচালক আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গুলশান থানায় যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। আরিফ বলেন, তিনি সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত গাড়িচালক নন, বাসায় কাজ করেন। তবে সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন, আরিফ তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি ছোট। সংবাদ হওয়ার মতো নয়।’ ছোট ঘটনাটি কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত শনিবার সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বিস্তারিত জানতে পারিনি।’

একজন সংসদ সদস্যের ছেলে পুলিশ সদস্যদের মারধর করেছেন, তথ্যটি জানার পর নিশ্চিত হতে এই প্রতিবেদক গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোহা. আ. আহাদের সঙ্গে। তখন তিনি বলেন, ঘটনাটি সত্য নয়। পরে দুপুরের দিকে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে আবার কথা হয়। তখন উপকমিশনার বলেন, পুলিশের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। রাতেই তা ঠিকঠাক হয়ে গেছে।

তবে কী নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে, তা বলতে চাননি তিনি।