চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ডাইনিংয়ের খাবারের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদসহ চারটি দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আজ শুক্রবার দুই ঘণ্টা অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা অবস্থান নেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সরে যান।
শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো, খাবারের মান বৃদ্ধি, প্রয়োজনে ভর্তুকি দেওয়া ও আবাসিক শিক্ষকদের হলে থেকে নিয়মিত খাবার খাওয়া।
বিকেল চারটায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারের বাসভবনের সামনের সড়কে (বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশে) অবস্থান করছেন। এসব প্ল্যাকর্ডে লেখা ছিল ‘খাবারের দাম বৃদ্ধি কেন’, ‘ভর্তুকির টাকা কই যায়’, ‘প্রভোস্ট (প্রাধ্যক্ষ) স্যার হলে আসেন, একসঙ্গে খাই’, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া দাম বৃদ্ধি কেন’ ইত্যাদি স্লোগান।
মূল্য নির্ধারণের আগে প্রতি বেলা খাবারের মূল্য ছিল ২৫-৩০ টাকা, এখন সে খাবার খেতে লাগবে ৩৫-৪০ টাকা। অন্যদিকে গত বছর সাহ্রির খাবারের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। এটি এবার ৬০ টাকা করা হয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল জোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, হল ডাইনিংয়ের খাবার ২০ থেকে ২৫ টাকা হলো, ২৫ থেকে এখন ৩৫–এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সাহ্রি ৬০ টাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হল ডাইনিংয়ে যারা খান, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া অযৌক্তিক। যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত খাবারের ভর্তুকি দেওয়া।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আলফাত মামুন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবিই যৌক্তিক। দাম বাড়ানো কোনোভাবেই সমাধান হতে পারে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন করে যাবেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা খাবারের দাম বাড়ানের প্রতিবাদ জানিয়েছে। দামের বিষয়টি সমন্বয় করতে একটি সভা ডাকা হয়েছে। এ সভায় উপাচার্য শিরীণ আখতার, সহ–উপাচার্য বেনু কুমার দে, হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর উপস্থিত থাকবেন। সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মূল্যতালিকা পুনর্নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। মূল্য নির্ধারণের আগে প্রতি বেলা খাবারের মূল্য ছিল ২৫–৩০ টাকা, এখন সে খাবার খেতে লাগবে ৩৫–৪০ টাকা। অন্যদিকে গত বছর সাহ্রির খাবারের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। এটি এবার ৬০ টাকা করা হয়েছে। খাবারের এ মূল্য গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাহ্রি থেকে কার্যকর হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে নভেম্বরে খাবারের দাম এক দফা বাড়িয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বাড়ানোর আগপর্যন্ত প্রতি বেলা খাবারের দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর সাহ্রির খাবার ছিল ৪০ টাকা।
দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ব্রয়লার মুরগিসহ বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় এ দামের মধ্যে মান ঠিক রেখে খাবার দেওয়া সম্ভব ছিল না। শিক্ষার্থীরা যেন ভালো মানের খাবার পান, এ জন্যই বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১১টি আবাসিক হল আছে। এর মধ্যে সাতটি ছাত্রদের ও চারটি ছাত্রীদের। এসব হলে প্রায় সাড়ে চার হাজার ছাত্র ও চার হাজার ছাত্রী রয়েছেন। ছেলেদের সাতটি হলের মধ্যে মাস্টারদা সূর্য সেন হল ছাড়া অন্যগুলোতে ডাইনিং রয়েছে। ডাইনিংয়ে খাবারের তালিকায় থাকে ভাত, ডাল, মাছ বা মাংস এবং সবজি বা ভর্তা।