আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবেন না হিরো আলম

ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। ২০ জুলাই, ঢাকা
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবেন না বলে জানিয়েছেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। তিনি ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে হামলার শিকার হন। তিনি বলেছেন, তাঁকে পছন্দ না হলে ভোট না দেবে। কিন্তু তাঁকে মারার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে গিয়ে ছবি দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করেছেন হিরো আলম। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ কথা বলেন। আজ বেলা সাড়ে তিনটায় তিনি ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে বের হন প্রায় দেড় ঘণ্টা পর।

ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে হিরো আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৭ জুন তাঁর ওপর যারা হামলা করেছিলেন, তাঁদের ১৬ জনকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হামলাকারী কি না, তা শনাক্ত করতে তাঁকে ডাকা হয়। তাই তিনি সেখানে গিয়ে তাঁদের শনাক্ত করেন।

হিরো আলম বলেন, ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, আরও চার-পাঁচজন বাকি আছে। আজকের রাতে তাঁদের ধরা হবে। এ বিষয়ে তাঁকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলেছেন। তবে তাঁর (হিরো আলম) মনে হয়েছিল হামলাকারীরা ক্ষমতাসীন দলের লোক, হয়তো পুলিশ তাঁদের ধরবে না।

ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হামলার শিকার হন হিরো আলম
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

হিরো আলম বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি, চেয়েছি সুষ্ঠু ভোট হোক, ভোটাররা ভোট দিতে আসুক। কিন্তু এর বিনিময়ে মার খেলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাব না।’

এই হামলায় তিনি মারাও যেতে পারতেন উল্লেখ করে হিরো আলম বলেন, ‘নির্বাচন-নির্বাচন করে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেকে মারা গেছেন। যারা ক্ষমতাসীন দলের লোক, তারা ঠিকই ক্ষমতা দেখায়, ক্ষমতা আদায় করে। নির্বাচন করতে এসে কোনো মায়ের যেন আর বুক খালি না হয়। যারা হামলা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন
ঢাকা-১৭ আসনে ভোট চলাকালে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিরো আলমকে মারধর করা হয়। ১৭ জুলাই, ঢাকা
ফাইল ছবি

তাঁকে মারার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে হিরো আলম বলেন, ‘আমাকে পছন্দ না হলে ভোট দিয়েন না, এড়িয়ে যান। কিন্তু আমাকে মারার অধিকার দেওয়া হয় নাই। সেদিন যেভাবে আমাকে মারা হয়েছে, একমাত্র ওপর আল্লাহর জন্য আমি বেঁচে আছি। হামলাকারীরা আমাকে পাষণ্ডের মতো মেরেছে, তাদের বিবেকে বাধেনি। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও তারা আমাকে মেরেছে।’

ঘটনার দিন বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার সমালোচনা করে হিরো আলম বলেন, ‘আমাকে যখন মারছিল, তখন আমি দৌড়ে বিজিবির গাড়ির কাছে গিয়েছিলাম। তারা কিন্তু গাড়ি থেকেই নামেনি। কেন্দ্রের ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্যরা যখন জানলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে মারা হচ্ছে, এটা শুনেও তাঁরা কেন বের হননি? বরং তাঁরা আমাকে মারার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। এগুলোর তদন্ত হওয়া দরকার।’

‘হামলার ঘটনা সাজানো, এমনও শোনা গেছে’, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘হামলায় যদি আমার লোকই থাকে, তবে তাদের আটক করত। যাদের ধরে আনা হয়েছে, তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে তারা যদি বলে ওরা আমার লোক, তাহলে আমি যে শাস্তি দেন, মাথা পেতে নেব।’

পুলিশ কি সেদিন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল, জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘পুলিশ ইচ্ছা করলে তাদের কর্তব্য পালন করতে পারত। প্রথমে একটা ছেলে আমাকে ঘুষি মারে। আমি কিন্তু দৌড়ে গিয়ে তাকে বলেছি, এই ঘুষি মারলি কেন? আমি পুলিশকে বলছি, এই লোকটি আমাকে ঘুষি মেরেছে। পুলিশ কিন্তু তাকে ধরেনি। উল্টো আমাকে ধরে রেখেছিল। পুলিশের উচিত ছিল তাকে ধরা। তাহলে আর কেউ আমার ওপরে হাত দিতে পারত না। সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্য ও বিজিবি সদস্যরা কেন নীরবতা পালন করেছিলেন, সেটি আমি জানতে চেয়েছি ডিবি প্রধানের কাছে।’

আরও পড়ুন

গত সোমবার ঢাকা-১৭ আসনের ভোট গ্রহণ চলাকালে বেলা সোয়া তিনটার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান হিরো আলম। এ সময় নৌকা প্রতীকের কর্মী–সমর্থকেরা পেছন থেকে তাঁর উদ্দেশে গালাগাল করতে থাকেন এবং কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে রেখে স্কুলের ফটকের দিকে নিয়ে যান।

ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে ধাওয়া দিয়ে বাইরে আনার পরে রাস্তায় ফেলে ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে পেটান নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা।