বইয়ের মেলা, স্মৃতিরও মেলা

উদ্‌যাপনেও স্মৃতি খোঁজে মানুষ। গতকাল শনিবার বইমেলায় অনেক মানুষ এসেছিলেন। তবে ভিড়টা শুক্রবারের তুলনায় কম ছিল। এর মধ্যে ৬ নম্বর প্যাভিলিয়ন ঘেঁষে দাঁড়ানো এক বর্ষীয়ান নারীর দিকে মনোযোগ ছিল অনেকেরই। খোঁপায় গোলাপ ফুল জড়ানো ষাটোর্ধ্ব সায়মা জাহান প্রাণ খুলে হাসছিলেন। দল বেঁধে এসেছেন বন্ধুরা। কেউ সরকারের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। এখন অবসরে সবাই। সায়মা জাহান জানান, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শতবার্ষিকী পুনর্মিলনীর আয়োজনে এসেছেন। ১৯৭৩-৭৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাঁরা। এনায়েত হোসেন নামের এক বন্ধু তাঁর সাবেক নারী সহপাঠীদের গোলাপ ফুল কিনে দিয়েছেন। বাড়ি ফেরার পর বন্ধুর (এনায়েত) স্ত্রী কী করবেন, তা–ই ছিল গল্পের প্রসঙ্গ। অনেক নতুন বইয়ের উৎসবে দাঁড়ানো এই মানুষদের দেখে যে কারও মনে হবে বুঝি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ!

প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলয়নের অন্য পাশে তখন আরেক দৃশ্য। রাজধানীর নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একসঙ্গে বই কিনতে মেলায় এসেছিলেন ১২ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সামি হোসেন জানান, ‘লেখাজোকার কারখানা’ নামে তাঁদের ৪৫০ সদস্যের একটা গ্রুপ আছে। শনিবার তাঁরা লেখক সুমন্ত আসলামের বই কিনতে এসেছেন। এর সঙ্গে প্র প্রকাশনের সব বই দেখবেন। তখন অন্য পাঠকেরা উল্টেপাল্টে দেখছেন প্রথমা প্রকাশনের মার্কিন দলিলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও কয়েকটি সাদা কাঠগোলাপসহ কয়েকটি বই।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আরেকটু ভেতরের দিকে এগোলে অন্বেষা প্রকাশন। স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন জানান, মেলা সেই করোনার আগের রূপে ফিরেছে বলে ভালো লাগছে। সামনে বই বিক্রি আরও বাড়বে বলে তাঁর বিশ্বাস।

গতকাল মেলায় এসেছে ১৯১টি নতুন বই। এর মধ্যে ৫১টি কবিতার। অন্বেষা থেকে লিটল ম্যাগের দিকে এগোলে মাঝখানে চন্দ্রবিন্দু বইয়ের স্টল। সেখানে তখন বই কিনতে এসে আপন মনে কবিতা আউড়ে গেলেন এক নারী। দু–একজন চলতি পথেই শুনলেন কিছুটা। তিনি পড়লেন সাদিকা রুমনের লেখা ডাকঘরের ডানা বই থেকে দুটি পঙ্‌ক্তি।

‘হেমন্ত এমন—

সন্ধ্যা এলে মনে হয়

প্রতিটি সন্ধ্যাই একটা স্বয়ম্ভূ কবিতা হতে পারত—’

ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে টিএসসির গেট দিয়ে ক্রমাগত মানুষ আসছে, যাচ্ছে মেলায়। সেখানে ছায়াময় একটুকরা ফাঁকা জায়গায় বিশাল এক গাছ আছে। একা দাঁড়িয়ে ছিলেন মাসুদুর রহমান নামের একজন পাঠক। বইয়ের ব্যাগটি মাটিতে নামিয়ে রেখেছেন তিনি। গত মেলায় এখানে দাঁড়িয়ে তাঁর স্ত্রী ঝগড়া করেছেন। বললেন, মানুষটা নেই, কিন্তু স্মৃতিটুকু আছে।