বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার হলে ঢাকার অপেক্ষায় না থেকে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। আজ সোমবার বিকেলে তিনি তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান।
গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ওই সভায় একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই কমিটি বাংলাদেশবিরোধী প্রচার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এরপর ওই রাতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘নতুন বছর উপলক্ষে বিদেশে দায়িত্বরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমরা কূটনীতিকদের উদ্দেশে বলেছি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ অপপ্রচার ও বানোয়াট তথ্য দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে। আপনাদের এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনারাই ব্যবস্থা নেবেন। এ বিষয়ে ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না।’
নবগঠিত কমিটি নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিথ্য তথ্য ও অপপ্রচার রোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি এটা নিয়ে কাজ করবে। প্রকৃত তথ্য ও ঘটনা তুলে ধরবে।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটা আমাদের মাথাব্যথা (হেডেক) নয়, আপনাদের (সাংবাদিক) হেডেক। নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের আশ্বস্ত করার কোনো দরকার নেই। আমরা আমাদের যে কাজ, সেটা করে যেতে চাই। জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকলে বিদেশি, নন–বিদেশি কোনো বিষয় নয়।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা মাস দুয়েক আগে হলেও বাংলাদেশে এক বছর আগ থেকেই হইচই শুরু হওয়াকে ‘ঢং’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয়। নির্বাচন হবে নির্বাচনের নিয়মে, যা সুষ্ঠুভাবে এবং সময়মতোই হবে। সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা জনগণের ওপর বিশ্বাসী। জনগণ যাকে চাইবে, তাকে ভোট দেবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, দেশে আগে জাল (ফ্রড) ভোট হতো। একবার ১ কোটি ২৩ লাখ লোক ভুয়া ভোট দিয়েছে। এখন ওটা বন্ধ। ফ্রডগিরি করতে পারবেন না। দেশে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাতে এরা ভালোভাবে নির্বাচন করতে পারে। সুতরাং সেখানে সব দল এলে ভালো আর যারা আসবে না, আসবে না।’
নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ পদ্ধতি বন্ধ করার পক্ষে মত দেন মোমেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে বলেন, আমেরিকায় চাইলে যে কেউ নির্বাচন করতে পারে না। যে দলের সমর্থন কম তারা নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। আমাদের দেশে চাইলে যে কেউ নির্বাচন করতে পারে। এটা এক মজার দেশ।
সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সীমান্তে কোনো লোক নিহত যেন না হয়। এটা আমাদের কোনো ব্যর্থতাও নয়। আপনাদের দেখতে হবে কেন ওই লোকটা মরল। ওটাও আপনারা খুঁজে দেখেন।’