আলোচনা সভায় বক্তারা
বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা বাড়াচ্ছে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, কর্মস্থলে সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ
আজকাল শিশু–কিশোরদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্করাও ফাস্ট ফুডের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবারে আকৃষ্ট হচ্ছেন। পাশাপাশি নগরায়ণের ফলে কায়িক পরিশ্রম কমে যাচ্ছে। নগরবাসীর মধ্যে অনিদ্রার পরিমাণ বাড়ছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের এসব পরিবর্তনই ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা বাড়ার অন্যতম বড় কারণ।
আজ শনিবার রাজধানীর বারডেম মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞ অতিথিরা এ কথাগুলো বলেন। ১৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ বছরের ডায়াবেটিস দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল—‘কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তুলুন’।
বক্তারা বলেন, মানুষ জীবনের একটি বড় অংশ কর্মস্থলে কাটান। তাই কর্মীদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে মানসম্পন্ন খাবারসহ অফিস নানা উদ্যোগ নিতে পারে।
আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য দেন বারডেম একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকে দিনের প্রায় ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় কাটাই আমাদের কর্মস্থলে। বেশির ভাগ কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর খাবার পাওয়া যায় না। যে কারণে বেশির ভাগ সময় কর্মীরা দোকান থেকে কেনা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খান। কর্মস্থলে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করতে হয়। কর্মস্থলে হাঁটাহাঁটি করার জায়গাও নেই বললেই চলে। কর্মীদের মধ্যে কাজের চাপ থাকে। সব মিলিয়ে তাঁদের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বলা হয়ে থাকে, প্রতি ১০ জন অফিস কর্মচারীর মধ্যে সাতজনই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং প্রতি চারজন অফিস কর্মচারীর মধ্যে মাত্র একজন পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম করছেন। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের কর্মক্ষমতা কমছে।’
কর্মস্থলে বছরে একবার ডায়াবেটিস ও ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা যেতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের (বিইউএইচএস) ইমেরিটাস অধ্যাপক হাজেরা মাহতাব। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কর্মীরা অনেক সময় মানসিক চাপে ভোগেন। তাঁদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এখন বেশির ভাগ স্কুলে মাঠ থাকে না। ঢাকা শহরের পার্ক ও পুকুরের জায়গায় ভবন হয়ে গেছে। আমরা জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।’
আলোচনা সভায় বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক মির্জা মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্ধত্ব, অঙ্গহানি, কিডনির জটিলতা ও অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কায়িক পরিশ্রম ও প্রয়োজনে পরিমাণমতো ওষুধ গ্রহণ করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ ও প্রায় স্বাভাবিক জীবন কাটানো যায়।’
কর্মীরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলে তাঁদের কর্মদক্ষতা বাড়বে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সহজলভ্য করতে হবে। অফিসের ক্যানটিনে যেন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাওয়া যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।’
অনেকে জেনেশুনে বিষপান করার মতো কাজ করেন, ডায়াবেটিস আছে জেনেও মিষ্টিজাতীয় খাবার খান। এমন অভ্যাস ত্যাগ করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ডায়াবেটিক কিডনি ডিজিজ প্রিভেনশন প্রোগ্রামের উদ্বোধন ও ‘বাডাস ডিকেডি হ্যান্ডবুক’–এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সাইফ উদ্দিন জানান, সারা বিশ্বে ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ নিজেদের রোগ সম্পর্কে জানেন না। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ।