মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অটল ছিলেন সাংবাদিক ইহসানুল করিম

ইহসানুল করিমের স্মরণে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত স্মরণসভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারা। ঢাকা, ২৫ মার্চ
ছবি: নাজনীন আখতার

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অটল ছিলেন সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইহসানুল করিম। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা করে গেছেন। চরম দুঃসময়েও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপস করেননি। তাঁর মৃত্যুতে সাংবাদিকতার জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভায় ইহসানুল করিমকে এভাবে স্মরণ করলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারা। আজ সোমবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যাস কমিউনিকেশন (আইআইএমসি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইমকাবিডি) ওই স্মরণসভার আয়োজন করে। ইহসানুল করিম এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৭৯ সালে ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত আইআইএমসিতে বাংলাদেশ থেকে বৃত্তি নিয়ে যাওয়া প্রথম শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

স্মরণসভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ইহসানুল করিম তাঁর সাংবাদিকতার পথচলায় সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। বন্ধুসুলভ আচরণ দিয়ে তিনি ছোট-বড় সাংবাদিকদের আপন করে নিতেন। তাঁর মৃত্যুতে সাংবাদিকতা জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

ইমকাবিডির জ্যেষ্ঠ সদস্য ফরিদ হোসেন বলেন, একজন সাংবাদিকের মধ্যে যে ধরনের গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, তা ছিল ইহসানুল করিমের মধ্যে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভালো সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি ভালো মানুষ ছিলেন ইহসানুল করিম।

ইহসানুল করিম স্মরণে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত একটি স্মারকগ্রন্থ করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কিছু করার মাধ্যমে ইহসানুল করিমের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হবে।  

স্মরণসভায় ইহসানুল করিমের ছেলে মঈনুল করিম বলেন, বাবা সাংবাদিক হিসেবে যেমন বিপদে-আপদে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তেমনি পরিবারের প্রতিও ছিলেন যত্নশীল। বাবা সব সময় বলতেন, মানুষের জীবন একরকম যায় না। যেকোনো পরিস্থিতি হাসিমুখে মেনে নিতে হয়। কখনো সততার সঙ্গে আপস না করার শিক্ষা দিতেন পরিবারের সদস্যদের।

স্বাগত বক্তব্যে ইমকাবিডির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন, ইহসানুল করিম বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে তিনি কখনো আপস করেননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সততা হৃদয়ে ধারণ করে সাংবাদিকতা করলে তাঁর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা হবে।

স্মরণসভায় ইহসানুল করিমকে স্মরণ করে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান, প্রধান বার্তা সম্পাদক সমীর কান্তি বড়ুয়া ও সাবেক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মনোজ কান্তি রায়; ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি মো. শফিকুল করিম এবং কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিকাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব।

ইহসানুল করিমের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন তাঁর চাচাতো বোন কঙ্কা করিম।

স্মরণসভায় কেন্দ্রীয় অ্যালামনাইয়ের শোকবার্তা পাঠ করেন ইমকাবিডির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইমকাবিডির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজুল ইসলাম ভুইয়া। সভা সঞ্চালনা করেন এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক ও ইমকাবিডির সদস্য গনী আদম।

ইহসানুল করিম ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ছিলেন। ইহসানুল করিম ১৯৭২ সালে বাসসে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বিভিন্ন সময়ে বিবিসি, পিটিআই, স্টেটসম্যান, ইন্ডিয়া টুডেসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ইহসানুল করিম। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রেস সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।