বঙ্গমাতা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী, দক্ষিণের আরেকটি দুয়ার খুলল

কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। ছবিটি শনিবার রাতে তোলাছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার সকালে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বঙ্গমাতা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

সেতুটি উদ্বোধনে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হলো। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় সেতুটি ঘিরে কচা নদীর দুই তীরের মানুষ উচ্ছ্বাসে ভাসছে। সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে। বাঁচবে ফেরি পারাপারের সময়।

সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাসুদ মাহামুদ বলেন, পিরোজপুর সদর ও কাউখালী উপজেলার মধ্যবর্তী কচা নদী দিয়ে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কটি বিচ্ছিন্ন ছিল। ফেরি পার হতে ৩০ মিনিট লেগে যেত। নদীর স্রোত তীব্র আকার ধারণ করলে সময় আরও বেশি লাগত।

পিরোজপুর জেলার বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের আরও একটি স্বপ্ন পূরণ হলো। এর মাধ্যমে বিভাগীয় শহর বরিশালের সঙ্গে বিভাগীয় শহর ও শিল্পনগরী খুলনার সড়ক যোগাযোগে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রার সঙ্গে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা ও সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে এবং সর্বোপরি পিরোজপুরের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তব্য দেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট পেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

এ উপলক্ষে বঙ্গমাতা সেতু এলাকায় পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ে দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পশ্চিম পাড়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও পূর্ব পাড়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন।

২০১৩ সালের ১৯ মার্চ পিরোজপুরের এক জনসভায় কচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তিনি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৯৪ দশমিক ০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪৯৩ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের এই পিসি বক্স গার্ডার সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করে। চীন সরকার এ সেতু নির্মাণে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য প্রদান করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করেছে ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ মাস আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শেষ করে সেতু বিভাগের কাছে গত মাসের ৭ তারিখ হস্তান্তর করেন। সেতুর পূর্ব প্রান্তে নদীর তীরে ২২০ মিটার দীর্ঘ ও ৫৫ মিটার প্রস্থের বিনোদন এলাকা উন্নয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব প্রান্তে অ্যাপ্রোচ সড়ক–সংলগ্ন ৬০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রস্থের বিটুমিনাস সড়ক, অ্যাপ্রোচ সড়কের নিচে ৬০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রস্থের কংক্রিট সড়ক এবং পশ্চিম প্রান্তে ১২০ মিটার দীর্ঘ ও ৩ দশমিক ৫০ মিটার প্রস্থের কংক্রিট সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২২০ মিটার নদীশাসনের কাজ করা হয়েছে। চীনের মেজর ব্রিজ রিকনাইসেন্স ও ডিজাইন ইনস্টিটিউট কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে চায়না রেইল ওয়াচ ১৭ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড সেতুটি নির্মাণ করে।