দেশি না বিদেশি—কোন টিভি কিনবেন

নতুন টেলিভিশন কিনতে গেলে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। কোন টিভি কিনব? দেশি ব্র্যান্ড নাকি বিদেশি? স্বদেশি পণ্য কিনে ধন্য হওয়ার চেয়ে গুণগত মানের দিকেই গুরুত্ব বেশি দেন গ্রাহকেরা। ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত আরও বেশি দেখা যায়। তাই টিভি কিনতে গেলে ভাবনার যেন শেষ নেই।

ইলেকট্রনিক পণ্যের একটা বিশাল সমাহার দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা হলেও টিভির ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে তৈরি টিভিই বিক্রির দিক থেকে এগিয়ে। বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের প্রোডাক্ট ম্যানেজার মো. মাহফুজুল আলম বলেন, টিভি কিনতে গেলে ক্রেতারা অতীতের মতো আর বিদেশি পণ্যের দিকে ঝুঁকে পড়েন না। কেননা, তাঁরা জানেন, দেশেই এখন তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের টিভি।

দেশের বাজারের ৮০ শতাংশ দখলে রেখেছে দেশি ব্র্যান্ড। তিন বছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েই চলেছে। তিনি আরও বলেন, করোনায়ও টিভি বিক্রি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এলইডি ও স্মার্ট এলইডি—দুই ক্যাটাগরির টিভিই আছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ স্মার্ট এলইডি, অন্যগুলো সাধারণ এলইডি। প্রতিদিন হাজার হাজার টিভি সংযোজন হচ্ছে দেশের বাজারে।

এত এত সংযোজনের মধ্যে স্মার্ট টিভির বিক্রিই বেশি বলে উল্লেখ করেন মো. মাহফুজুল আলম। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট টিভির চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে। দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে থাকায় ৩২ ও ৪৩ ইঞ্চি মাপের টিভির চাহিদা বেশি। তা ছাড়া ৫৫ ইঞ্চি মাপের ফোরকে টিভির ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। বিদেশি টিভির কথা যদি বলি, তাহলে খুব কম পরিমাণে পরিপূর্ণ টিভি রপ্তানি করা হয়। যন্ত্রাংশ আমদানি করে দেশেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান স্বনামধন্য টিভিগুলো তৈরি করে। আমদানি করা যন্ত্রাংশ জোড়া দিয়ে ১৮ থেকে ২১টি ধাপে সম্পন্ন করা হয় একেকটি এলইডি টিভি সংযোজনপ্রক্রিয়া।’

দেশের উদীয়মান এ শিল্পের অগ্রগতিতে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোনো একটা বিষয়ে বাংলাদেশে খুব ভালো কিছু অর্জন করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই খাতগুলোকে পিছিয়ে থাকতে দেখা যায়। এখানে দক্ষ জনশক্তির অভাব, মানসম্মত কাঁচামালের অভাব। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করাও অন্যতম সমস্যা। দক্ষ জনবল তৈরিতে কিছু উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। আমাদের দেশে যেসব ইনস্টিটিউট রয়েছে, সেগুলোতে এ শিল্পে দক্ষতা উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া, ইঞ্জিনিয়ারদের আরও প্রশিক্ষিত করা এবং প্রয়োজনে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ থেকেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভ্যাট-ট্যাক্সের প্রক্রিয়া সহজ করা, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং কাঁচামাল সহজলভ্য করা গেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আরও এগিয়ে যেতে পারবে।’

একটা সময় ছিল, বিদেশ থেকে জাহাজ বোঝাই করে ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেশে আসত। বর্তমানে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। জাহাজ বোঝাই করে বাংলাদেশের তৈরি ইলেকট্রনিক সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এটা নিয়ে খ্যাতিও পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই খ্যাতি আর গর্ব যারা এনে দিয়েছে, তারা হলো বাংলাদেশের সুপরিচিত ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। ওয়ালটনের রয়েছে অনেকগুলো ব্র্যান্ডের পণ্য।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্মার্ট এলইডি টেলিভিশন উৎপাদন ও রপ্তানি করে ওয়ালটন। বাংলাদেশের টিভি–বাজারে ওয়ালটন শীর্ষস্থানীয়। ২০১০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজস্ব কারখানায় তৈরি টেলিভিশন রপ্তানি করে ব্র্যান্ডটি। বর্তমানে ইউরোপ, জার্মানি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, স্পেনসহ বিশ্বের ৩৫টির বেশি দেশে ওয়ালটন টেলিভিশন রপ্তানি করছে এবং দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলছে।