জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার নিয়ে প্রথমবার প্রস্তাব পাস

ছবি: এএফপি

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রথমবারের মতো মিয়ানমার নিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি দেশটির রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সুচিসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল বুধবার সকালে পাস হওয়া প্রস্তাবটিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের ওয়েব টিভি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

যুক্তরাজ্যের উত্থাপিত প্রস্তাবটির পক্ষে ১২টি দেশ ভোট দিলে বিপক্ষে কোনো দেশ ভোট দেয়নি। এখানে বলে রাখা ভালো মিয়ানমারের সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে জাতিসংঘের মতপার্থক্য দীর্ঘদিনের। কারণ, দেশটির দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাশিয়া ও চীন যেকোনো কঠোর পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছে। সবশেষ ভোটাভুটিতে বিরত থেকেছে রাশিয়া ও চীন। এবার তাদের সঙ্গে ভোটদানে বিরত থেকেছে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ভারত। চলতি মাসে ভারত নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে।

প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, ‘এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে আমরা যে সামরিক জান্তার প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছি, তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে প্রস্তাবিত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে। আমাদের প্রস্তাবটি যে মিয়ানমারের জনগণের অধিকার, আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ সেই বার্তাটিও তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’

গতকাল প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ঝ্যাং জুন বলেন, চীনের এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে। আর সেখানকার সমস্যার কোনো চটজলদি সমাধান নেই। সেখানকার সমস্যার একমাত্র সমাধান নির্ভর করছে মিয়ানমারের ওপর। তিনি মিয়ানমার নিয়ে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করার পরিবর্তে নিরাপত্তা পরিষদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রচারের প্রস্তাব দেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মস্কো মনে করে না। তাই নিরাপত্তা পরিষদের বিষয়টি নিয়ে কাজ করা উচিত হবে না।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, ভোটদানের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন ও নরওয়ে তাদের বক্তব্যে প্রস্তাবটিতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি করণের প্রশংসা করে এই সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানান। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরও সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

আরও পড়ুন

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালে ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ এখন পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেন এবং শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নিমিত্ত বিশ্ব নেতাদের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে আসছেন। এই প্রস্তাবনা অনুমোদিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। একই সঙ্গে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এ–সংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী ও ত্বরান্বিত করবে।

আরও পড়ুন

প্রস্তাবটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। পরিষদ রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নিমিত্ত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানায়। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, সে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া এ সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐকমত্যের দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কি না, সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ও মিয়ানমার–বিষয়ক বিশেষ দূতকে ১৫ মার্চ ২০২৩ তারিখের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন পেশ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।