বিনিয়োগের গন্তব্য হোক বাংলাদেশ

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ভারতীয় শিল্পপতিদের উদ্দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির আহ্বান, ‘অনুগ্রহ করে আপনারা পূর্ব পানে তাকান। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক ভাবনায় বাংলাদেশকে সংযুক্ত করুন। ব্যবসা-বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ ওখানেই।’ ভারতীয় বণিক সভা ‘ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ (ফিকি) এবং বাংলাদেশের ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) এক যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনার উজ্জ্বল দিকগুলো তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভারতীয়দের সক্রিয় সহযোগিতা ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ কোন অবস্থা থেকে আজ কোথায় পৌঁছেছে, তা স্বচক্ষে দেখুন। বাণিজ্য সম্ভাবনার যে দিক উন্মোচিত, সেখানে অংশ নিন নিজেদের স্বার্থে। আমরা শুধু বলতে পারি, আপনারা বিফল মনোরথ হবেন না।’

ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা ফিকি সভাকক্ষে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি ও আবহকেই তুলে ধরলেন। তৈরি পোশাক শিল্পই শুধু নয়, দেশের প্রয়োজনের পাশাপাশি বাংলাদেশ আজ কীভাবে ওষুধ, সিরামিক, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ, বিদ্যুৎ, মোড়কজাতকরণ, ছাপা, হালকা প্রকৌশল, অবকাঠামো, পর্যটন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সম্ভাবনার ছাপ রাখছে, তা বিধৃত করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে লগ্নি করলে বোঝা যাবে বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী কথাটা কেন প্রচলিত। আজকের বাংলাদেশ লগ্নিকারকদের ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতেই অপার সম্ভাবনার সুর বেঁধে দেন ফিকির পরিচালক অরুণ চাওলা। তিনি বলেন, আজ এই উপমহাদেশে ভারতীয় বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় সাথি বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে সর্বক্ষেত্রে যোগাযোগ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে সম্ভাবনার নতুন নতুন দিক খুলে যাচ্ছে। বাণিজ্যের অকল্পনীয় সব অভিমুখ খুলে যাচ্ছে। দুই দেশের শিল্পপ্রধানদের কাছে ফিকি অনুঘটক হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নতুন নতুন আঙ্গিক খুলে দিতে চলেছে। ভারতের উচিত সেই সুযোগ গ্রহণ করা।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ও তাঁর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দেশের লগ্নি পরিস্থিতি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে শুধু রাজনৈতিক স্থিরতাই দেননি, সামাজিক সুস্থিতির স্থিরতাও দিয়েছেন। তাঁর শাসনকালে দেশের দারিদ্র্য কমে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অতি গরিবের সংখ্যা ১০ শতাংশের নিচে। এর অর্থ একটাই, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। গড়ে উঠেছে এক বিপুল মধ্যবিত্ত সমাজ। ফলে বাজার বাড়ছে, সেই সঙ্গে বিনিয়োগের সুযোগও। তিনি বলেন, যোগাযোগের বহর বাড়ার দরুন উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল। এ কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাজারও এসে পড়ছে নাগালের মধ্যে। বিনিয়োগকারীদের কাছে আজকের পরিস্থিতি তাই ‘উইন-উইন’।

বাংলাদেশে বাণিজ্য ও লগ্নি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। বাংলাদেশে তিন দশকের বেশি বাণিজ্যের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন টাটা মোটরসের ভাইস প্রেসিডেন্ট অনুরাগ মেহরোত্রা ও অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপের জিতু জোস। ভারতীয় শিল্পপতিদের উদ্দেশে অনুরাগ মেহরোত্রা বলেন, ‘তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতার আলোয় বলতে পারি, বাংলাদেশ ভবিষ্যতের দেশ। ভবিষ্যৎ হলো দূষণমুক্ত প্রযুক্তির। ভারতীয়রা এই দিকে দৃষ্টি দিন। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় বিরাট। সম্পর্কের চমৎকার বন্ধনের পাশাপাশি বাণিজ্যও হবে লাভজনক।’