নতুন সংকটে ঢাকা–দিল্লি সম্পর্ক

বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা

সম্প্রতি ঢাকা ও দিল্লিতে দুই দেশের হাইকমিশনারদের পাল্টাপাল্টি তলবের ঘটনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। গত শনিবার রাতে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

এরই মধ্যে গতকাল সোমবার সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে হামলা করেছে হিন্দুত্ববাদী তিনটি সংগঠন। এরপর ভিসা কেন্দ্রটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ।

অনিবার্য কারণ উল্লেখ করে এদিন দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা। পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত ভিসা ও সব ধরনের কনস্যুলার সেবা স্থগিত থাকবে। পৃথক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই দুই মিশন ভিসা সেবা বন্ধের কথা জানায়।

আরও পড়ুন

এদিকে আজ মঙ্গলবার দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাছে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা-দিল্লি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন সংকটের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিচ্ছে, সম্প্রতি ময়মনসিংহে পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে নির্মম হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে দেখাতে চাইছে ভারত।

আরও পড়ুন

সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গত রোববার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দেয়। গতকাল সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে শিলিগুড়ি, কলকাতা ও গুয়াহাটিতে বিক্ষোভ এবং মুম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠন।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাছে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা-দিল্লি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন সংকটের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

প্রসঙ্গত, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে গত শনিবার রাতে বিক্ষোভ করে চরমপন্থী সংগঠন ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ২০-২৫ জনের একটি দল। তারা সেখানে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। পাশাপাশি তারা ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেয়।

দিল্লিতে ভিসা সেবা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, গত শনিবার রাতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে হাইকমিশনের কাছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। ভিসা সেবা বন্ধের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বেলা দেড়টা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), কংগ্রেসের পাশাপাশি নাস্তিক মঞ্চ এবং অল ইন্ডিয়া সেক্যুলার ফ্রন্ট বাংলাদেশ মিশনের কাছে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ বাংলাদেশ মিশনের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তাদের আটকে দেয়।

শিলিগুড়িতে হামলার পর বন্ধ ভিসা কেন্দ্র

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে হামলা করেছেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভিএইচপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের সদস্যরা। এর আগে তাঁরা শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে সমবেত হন। এরপর তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ঘেরাও করেন। বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, দীপু দাসের হত্যার বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।

পরে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদল ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। তখন তারা ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখতে বলে।

উল্লেখ্য, দিল্লি ও কলকাতার কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরে ‘ডিইউডিজিটাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে।

বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদলের এক সদস্য ডিইউডিজিটালের কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, ‘আপনাকে একটাই অনুরোধ, এই অফিসের তালা খুলবে না। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হবে, আপনি এখানে ব্যবসা করবেন, সেটা হবে না। বাংলাদেশের ভিসাসংক্রান্ত ব্যানার অথবা বোর্ড আজকের মধ্যে সরিয়ে নিন।’

কলকাতা থেকে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে ডিইউডিজিটাল গতকাল বেলা তিনটার আগেই ভিসা কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর পুনরায় ভিসা কেন্দ্র চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে শিলিগুড়িতে ওই ভিসা কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কলকাতা দপ্তরে কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন।

কলকাতায় বিক্ষোভ

কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বেলা দেড়টা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), কংগ্রেসের পাশাপাশি নাস্তিক মঞ্চ এবং অল ইন্ডিয়া সেক্যুলার ফ্রন্ট বাংলাদেশ মিশনের কাছে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ বাংলাদেশ মিশনের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তাদের আটকে দেয়। বিক্ষোভকারীরা এ সময় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে নাস্তিক মঞ্চ এবং অল ইন্ডিয়া সেক্যুলার ফ্রন্টের দুটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে এসে স্মারকলিপি দেয়।

মুম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলন

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গতকাল মুম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভিএইচপি। হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠন হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চায়। এসব দাবিতে ভিএইচপি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভিএইচপির আন্তর্জাতিক সভাপতি অলোক কুমার বাংলাদেশে দীপু চন্দ্র দাসকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা জানান।

অলোক কুমার বলেন, ভিএইচপি আশা করে, বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধ ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের জনগণ শান্তি, মানবাধিকার এবং নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার অধিকারী। বাংলাদেশে সম্প্রীতি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সব ন্যায্য, আইনসম্মত ও মানবিক উদ্যোগে ভারতের সমাজ ও সরকারের সমর্থন অব্যাহত রাখবে।