মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপদেষ্টার ছবির জায়গায় ছবি দেওয়া নিখোঁজ শিশুটি উদ্ধার

উদ্ধারের পর পুলিশের গাড়িতে বসে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছে শিশু মো. আলিফছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক নিখোঁজ শিশু দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের ছবির জায়গায় ছবি দেওয়া নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে আজ বুধবার মো. আলিফ নামে চার বছরের ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়।

‘মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপদেষ্টার ছবির জায়গায় কেন শিশুর ছবি’ শিরোনামে ২৬ মে অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। মূলত আন্তর্জাতিক নিখোঁজ শিশু দিবসে (২৫ মে) সচেতনতা তৈরিতেই মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল। শিশুটি ২৩ মে দুপুরে টঙ্গী থেকে নিখোঁজ হয়।

আলিফকে আজ সকালে উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বায়েজীদ নেওয়াজ। এ সময় শিশুটির পরিবার এবং ‘অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এসআই বায়েজীদ বলেন, ২৩ মে শিশুটির বাবা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুটির ছবি প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসতে থাকে। পুলিশ প্রতিটি তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজ নেয়। একপর্যায়ে আশুলিয়ায় তহমিনা নামের এক নারীর বাসায় যায় পুলিশ। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গতিবিধি অনুমান করে ঝিনাইদহে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

আটক ওই নারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, এই নারী ছদ্মনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু চুরি করে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করেন।

শিশুটির বাবা মো. কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা ফেসবুক থাইকা আলিফের খোঁজ পাইছি। কিন্তু আমার ছেলেরে লইয়া ওরা আশুলিয়া থাইকা ভাইগা যায়। পরে ওই মহিলার (অপহরণকারী) বড় ছেলেরে পুলিশ ধরছে। সেই লোকের কথাতে পুলিশ ভাইদের সাথে আমরা রাইতে কালীগঞ্জে গেছি। সকালে ওরাও গাড়ি থেকে নামছে, আর আমরাও ধইরালাইছি।’

একমাত্র ছেলেকে ফেরত পাওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ ও অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আলিফের বাবা।

আলিফের বাবা, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বরাতে জানা গেছে, ২৩ মে টঙ্গীর ছোটবাজার এলাকার এরশাদ নগরে একটি দোকানের সামনে থেকে ওই নারী আলিফকে নিয়ে আশুলিয়ায় নিজের বাসায় যান। সেখানে শিশুটিকে নিজের ছেলে দাবি করলেও আশপাশের মানুষের সন্দেহ হয়। এলাকাবাসী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করেন।

তথ্য পেয়ে পুলিশের একজন এসআই সেখানে গেলেও ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে সন্দেহ না হলে তিনি ফিরে যান। পরে একজন শিক্ষার্থী সাইবার টিনসের টোল ফ্রি নম্বর ১৩২১৯-এ ফোন করলে পুলিশ আবার অভিযান চালায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিখোঁজ শিশু খোঁজার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’ পদ্ধতি। কোনো শিশু হারিয়ে গেলে বা অপহৃত হলে এর মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ ওই এলাকার বাসিন্দাদের মোবাইলে জরুরি বার্তা চলে যায়। ফলে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।

বাবা মো. কাসেমের কোলে শিশু মো. আলিফ। উদ্ধার অভিযানে থাকা পুলিশ কর্মকতাদের একজন (বাঁয়ে) ও ‘অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশ’–এর উদ্যোক্তা সাদাত রহমান (ডানে)
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে এ রকম একটি উদ্যোগ চালুর চেষ্টা করছেন সাদাত রহমান নামের এক তরুণ। এই পদ্ধতি দেশে চালু না থাকলেও বর্তমানে ‘অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামে ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে দিয়ে শিশুদের খুঁজে পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রতিবেদন লেখার সময় আজ রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ওয়েবসাইটে আলিফের ছবি দেওয়া ছিল।

এ উদ্ধার অভিযানে সরাসরি যুক্ত থাকা সাদাত রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুটির ছবি এবং তাঁর পরিবারের সাক্ষাৎকারের ভিডিও ছড়িয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। ৬৫ হাজার মানুষ এগুলো শেয়ার করায় কাজটি সহজ হয়েছে। এরপর অনেকেই তথ্য দিয়ে সাড়া দেন। আমাদের হেল্পলাইনে ফোন করে জানানো হয়, আশুলিয়ায় খেজুরবাগান এলাকায় এ রকম একটি শিশুকে দেখা গেছে। এরপর পুলিশ ওই নারীর বাসায় এবং পরে ঝিনাইদহে অভিযান চালায়।’

সাদাত মনে করেন, পশ্চিমা অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’ চালু হলে নিখোঁজ শিশুদের সন্ধান পাওয়ার কাজ আরও দ্রুত ও সহজ হবে। আলিফের ক্ষেত্রে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সমর্থন থাকায় উদ্ধারকাজ গতি পেয়েছে। এ ঘটনার পর সরকারি সব ওয়েবসাইটে নিখোঁজ শিশুর খবর প্রচারের বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন