তিন দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ১৬৮ জন

  • তৃতীয় দিনে গতকাল প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আরও ৬১ জন।

  • ১০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া আপিল শুনানি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশনে আপিল নিষ্পত্তির তৃতীয় দিনে গতকাল মঙ্গলবার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আরও ৬১ জন। এ নিয়ে তিন দিনে ১৬৮ জন প্রার্থিতা ফিরে পেলেন।

এখন পর্যন্ত ২৯১টি আপিল আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে। বাছাইয়ের সময় তাঁদের বেশির ভাগের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

গতকাল যাঁরা প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁদের প্রায় সবার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল সমর্থনসূচক ১ শতাংশ ভোটারের সইয়ের গরমিলের কারণে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকা জমা দিতে হয়।

আপিল নিষ্পত্তির তৃতীয় দিনে গতকাল ৯৮টি আপিল শুনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ৬১টি আপিল মঞ্জুর করা হয়। নামঞ্জুর হয় ৩৫টি। দুটি আপিলের রায় পরে জানানো হবে।

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এবার ৩০০ সংসদীয় আসনে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। বাছাইয়ে ৭৩১টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে মোট ৫৫৮টি আপিল হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর আপিল শুনানি শুরু হয়, যা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে গতকাল আপিলে তৃণমূল বিএনপির ৩ জন, জাতীয় পার্টির ৩ জন, সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের ২ জন, বিএনএফের ১ জন, জাসদের ৪ জন, গণফোরামের ২ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৩ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ২ জন, বিএনএমের ১ জন, কল্যাণ পার্টির ১ জন, ওয়ার্কাস পার্টির ১ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান শুনানি নেন। তবে এর আগের নির্বাচনে আপিল শুনানি উন্মুক্ত থাকলেও এবার তা ছিল না। আপিলের সময় সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। শুধু আপিলের সিদ্ধান্ত শুনানিকক্ষের বাইরে মনিটরে (বড় পর্দায়) দেখানো হয়।

গতকাল যাঁরা প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঝালকাঠি-১ আসনের মনিরুজ্জামান। তিনি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। সমর্থনসূচক ১ শতাংশ ভোটারের সইয়ের গরমিলের কারণে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। এই আসনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া শাহজাহান ওমরকে।

ঝালকাঠি-১ আসনে একজন ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী রয়েছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কে হেভিওয়েট, কে কম ওয়েটের প্রার্থী, সেটা জানি না। আমি তো ছোটখাটো মানুষ। আমার ওজন কম হতেই পারে। যিনি লম্বাচওড়া, তিনি তো হেভিওয়েট হতেই পারেন। কিন্তু চিন্তা বা বিবেচনার বিষয় হওয়া উচিত, পলিটিক্যালি আমি কতটুকু কমিটেড।’

আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পালও আপিলে গতকাল প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তিনি। সুব্রত পাল গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নৌকা ছাড়াও যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান গনি। ইসি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘ঠুনকো কারণে’ তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থিতা ফিরে পেতে কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা ইসলাম। তিনি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। গতকাল আপিল শুনানিতে তাঁর মনোনয়নপত্র নামঞ্জুর হয়। সেলিনা ইসলামের স্বামী বরখাস্ত হওয়া সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল। মানব পাচার ও অর্থ পাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতে দণ্ডিত হন শহিদ। তিনি এখন কুয়েতের কারাগারে সাজা খাটছেন।

আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন সিলেট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইহতেশামুল হক চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় মহাসচিব। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনে গরমিল থাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন।