সমালোচনা সত্ত্বেও স্থায়ী হলো দ্রুত বিচার আইন

জাতীয় সংসদ ভবনফাইল ছবি

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই আইন স্থায়ী করার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা বলেছেন, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক কারণে বা সরকার চাইলে যেকোনো কারণে নাগরিককে হয়রানি করতে পারে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

২০০২ সালে প্রথম আইনটি করা হয়েছিল দুই বছরের জন্য। এরপর সাত দফায় এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার জন্য সংসদে বিল পাস করা হলো।

আজ বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার যখন আইনটি করেছিল, তখন আওয়ামী লীগ এটিকে নিপীড়নমূলক ও কালো আইন বলেছিল। এই আইনের মাধ্যমে রাজনৈতিক কারণ বা সরকার চাইলে যেকোনো কারণে নাগরিককে হয়রানি করতে পারে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই আইন কেন রেখে দেওয়া হলো—এমন প্রশ্ন তোলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক। আইনটি স্থায়ী না করে প্রয়োজনে দু-এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘আইনটা স্থায়ী করবেন না, করলে ভবিষ্যতে একদিন আপনাদের এমন অবস্থা হবে, সেদিন আফসোস করবেন।’

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিএনপির আমলে যখন আইনটি করা হয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এর বিরোধিতা করেছিল। তিনি বলেন, ‘যার জন্য গর্ত খুঁড়বেন, নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হয়। আজকে বিএনপি সেই গর্তে পড়েছে। এখন আওয়ামী লীগ আইনটিকে স্থায়ী করতে নিয়ে এসেছে। দিন একরকম থাকবে না।’

সমালোচনার জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সংসদ সদস্যদের কেউ বলেননি আইনটি বাতিল করতে। তাঁরা আইনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছেন। আইনটি একই রকম আছে। কাউকে উদ্দেশ করে বা ক্ষতি করার জন্য আইনটি হয়নি। কোনো রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না এ আইনের মাধ্যমে শাস্তি হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মুজিবুল হক বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন আইনটি ভালো। তাহলে বিএনপি যখন আইনটি করেছিল তার বিরোধিতা আওয়ামী লীগ করেছিল কেন? তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তারা বলতে পারবে এই আইনের অপপ্রয়োগ হয় কি না। জাতীয় পার্টি যদি কখনো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যায়, তখন তারা বলতে পারবে অপপ্রয়োগ হচ্ছে কি না।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আইনটি কখন আনা হয়েছিল তা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। শান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য আইনটি স্থায়ী করা হচ্ছে।