সাবেক সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ২৭০ ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল

উড়ালসড়কে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কেনা জমিতে আমলাদের জন্য তৈরি হচ্ছে ভবন। ২০ মে দিয়াবাড়িতেছবি: খালেদ সরকার

সরকারি টাকায় অধিগ্রহণ করা জমিতে সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ২৭০টি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে সেতু বিভাগের সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে এ সভা হয় বলে সেতু কর্তৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সভায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মাণাধীন আবাসন প্রকল্পে নিয়মবহির্ভূতভাবে ফ্ল্যাট নির্মাণ ও বরাদ্দ প্রদানের অভিযোগসংক্রান্ত গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ গৃহীত হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ২৭০টি ফ্ল্যাটের সাময়িক বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’

গত ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘সরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নেন সচিবেরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হককে। অন্য দুই সদস্য ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।

কী পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে এবং কাদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে, তা তদন্ত করাই ছিল কমিটির কাজ। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা; যাঁদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিংবা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জমি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না, তা–ও যাচাই করার কথা ছিল তদন্ত কমিটির কার্যপরিধিতে।

আরও পড়ুন
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভা হয়। ২১ আগস্ট
ছবি: সেতু কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে

সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য আবাসন নির্মাণের জন্য কেনা ৪০ একর জমি থেকে ১ দশমিক ১৫ একর জমি নিয়ে ৪টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছিল। এর মধ্যে তিনটি ভবন সচিব ও বড় আমলাদের জন্য। তাতে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়ে গেছে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাদ্দের চিন্তা ছিল বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছিল। চারটির মধ্যে একটি ভবন রাখা ছিল সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য, যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ১১২টি।

ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তরা মডেল টাউনে (তৃতীয় ধাপ), যা দিয়াবাড়ি এলাকা নামে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন সময় সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদে থাকা সচিবেরা ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ফ্ল্যাট পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী আমলারা।

সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও পেয়েছেন পানির দামের ফ্ল্যাট। যেসব কর্মকর্তা সচিব পদে থেকে এসব ফ্ল্যাট নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের আবার রাজউকের প্লট রয়েছে। সরকারি পদে থেকে তাঁরা ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট—দুটোই নিয়েছেন।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এর আওতায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন