বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটু কম-বেশি হবেই: প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, এটা একটু কম-বেশি হবেই। কিন্তু আমাদের নানা লোকজন রয়েছে, যারা এটা নিয়ে নানা রকম মন্তব্য ও গুজব করে বেড়ায়।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। তিনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের ৩ মাসের খাদ্য কেনার যে রিজার্ভ, সেটা থাকলেই যথেষ্ট। তবে ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যপণ্যে পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। নিজের দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাদের। তারই সঙ্গে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যুদ্ধ অর্থহীন। কারণ, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এই যুদ্ধ শুধু যারা অস্ত্র তৈরি করে, তারাই লাভবান হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যুদ্ধ শুধু যুদ্ধই না, তার সঙ্গে আবার স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা)। এই স্যাংশন, পাল্টাপাল্টি স্যাংশনের ফলে আজকে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তারা এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়, জ্বালানি সাশ্রয়, খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এ কারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমাদের মতো দেশ, কেবল আমরা উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছি। আমরা একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আপ্রাণভাবে। আর তখনই এই ধরনের বাধা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আজকে জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যাপারে সকল দেশই কিন্তু নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরাও সেটা অনুসরণ করছি।’

কেবল রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর না করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শুধু রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল নয়, রপ্তানিনির্ভর বিদেশি মুদ্রা অর্জনের দিকে আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাস্কেটকে আরও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বিদেশে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পণ্য যাতে বিদেশে রপ্তানি হয়, সে জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণ করা ও পণ্যের জন্য নতুন নতুন বাজার আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যেখানে যে পণ্যের চাহিদা, সেই ধরনের পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পদক্ষেপ আমরা নেব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটা কথা সব সময় মাথায় রাখতে হবে, পরনির্ভরশীলতা আমাদের কমাতে হবে। নিজেদের পায়ে নিজেরা যেন দাঁড়াতে পারি, সে ব্যবস্থাটাই করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দরকার হচ্ছে, একটা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। কেননা, আমাদের যুবসমাজ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। আমরা তা নিচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।