জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোশারেফ হোসেনকে (রাজীব মীর) চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে এক বছরের বেশি আগে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি জীবিত থাকলে আইন অনুযায়ী চাকরিতে যে আর্থিক সুবিধাদি পেতেন, তা তাঁর স্ত্রীকে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।
এ নির্দেশ কার্যকর না করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে আবেদন করেছিলেন রাজীব মীরের স্ত্রী সুমনা খান। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন।
রায় কার্যকর না করায় কেন তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যধারা শুরু করা হবে না ও আদালত অবমাননার জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ইমদাদুল হক ও রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রাজীব মীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ–সংক্রান্ত আদেশের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।
মীর মোশারেফ হোসেন, রাজীব মীর নামে বেশি পরিচিত। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ–সংক্রান্ত আদেশের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন মীর মোশারেফ হোসেন।
রিট আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাজীব মীরকে যে অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়, সেই অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। তবে রাজীব মীরকে এর কপি না দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেতে আবেদন করেও বিফল হন তিনি। তদন্ত প্রতিবেদন না দিয়েই শাস্তিমূলক ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যে কারণে রাজীব মীর যথাযথভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ২১ জুলাই মারা যান রাজীব মীর। এ অবস্থায় রিটে আবেদনকারী হিসেবে তাঁর স্ত্রী সুমনা খান ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর স্থলাভিষিক্ত হন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন।
এ রায় স্থগিত চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে; যা গত ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত আবেদনটি আগামী ৫ জুন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায় কার্যকর না হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে তুলে আবেদন করেন সুমনা খান। শুনানি নিয়ে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট আদালত অবমাননার রুল দেন।
সুমনা খানের আইনজীবী শাহদীন মালিক আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্ট রাজীব মীরের বরখাস্তের আদেশ বেআইনি ঘোষণা করেছেন। জীবিত থাকলে তাঁর চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ হতো। যেহেতু তিনি মারা গেছেন, তাই মারা যাওয়ার দিন পর্যন্ত তিনি চাকরিতে ছিলেন বলে ধরে নিতে হবে। এ হিসাবে আইন অনুসারে তাঁর চাকরির আর্থিক সুবিধাদি তাঁর স্ত্রীকে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় গেলেও এই রায় বাস্তবায়ন হয়নি। রায় বাস্তবায়ন না করায় হাইকোর্ট ইতিমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন। এখনো রুলের জবাব আসেনি।’