অন্তর্বর্তী সরকার মবতন্ত্র ঠেকাতে কাজ করেনি

শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার বিচার এবং প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে আক্রমণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজের প্রতিবাদ সমাবেশ। ধানমন্ডি, ঢাকা; ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ছবি: প্রথম আলো।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার বিচার এবং প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে আক্রমণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ করেছে নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজ। তারা অভিযোগ করে, অন্তর্বর্তী সরকার মবতন্ত্র ঠেকানো এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করেনি।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে এই প্রতিবাদী সমাবেশ হয়। এতে শিল্পী, গবেষক, চিন্তক, সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেন। সমাবেশের স্লোগান ছিল ‘জনতায় আস্থা, মবতন্ত্রে অনাস্থা’।

বেলা সাড়ে তিনটার পর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে আবাহনী মাঠসংলগ্ন ফুটপাতে জড়ো হতে থাকেন শিল্পীরা। বিকেল পৌনে চারটার দিকে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করেন তাঁরা।

এ সময় অনেকের হাতে ছিল ‘মব রাজনীতি মানি না’, ‘ধর্মের নামে মববাজি আর চলবে না’, ‘শিল্পীর কণ্ঠ থামানো যায় না’, ‘ইনসাফ কায়েমে বেইনসাফের জায়গা নেই’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড।

এ সময় উন্মুক্ত ক্যানভাসে ছবি এঁকে ও লিখে প্রতিবাদ জানান শিল্পীরা। একটি ক্যানভাসে দেখা যায়, প্রথম আলোর বেশ কয়েকটি পত্রিকার চারপাশে কালো রং দেওয়া। প্রথম আলোতে হামলা ও আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে এটি করা হয়েছে। আগুনে পুড়েও প্রথম আলো নির্ভিকভাবে সত্য সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে—প্রতিকীভাবে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে ক্যানভাসে।

সমাবেশে শিল্পীরা বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়া ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যুর পাশাপাশি আরও কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনার দিকে নজর দিলে বোঝা যায় যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থতার মুখে।

শিল্পীরা আরও বলেন, ওসমান হাদির চিহ্নিত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি এই সরকার আরও যে যে ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরম্পরা সৃষ্টি করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী কর্তৃক সমাজ ও রাজনীতিতে একক কর্তৃত্ব অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এর শুরু হয়েছিল ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে।

ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে আবাহনী মাঠসংলগ্ন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজ
ছবি: প্রথম আলো।

অন্তর্বর্তী সরকার মবতন্ত্রকে ঠেকানো এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করেনি অভিযোগ করে শিল্পীরা বলেন, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীতে হামলায় সরকার নীরব সমর্থন দিয়েছে। যারা মব করে, তারা গণতন্ত্রের শত্রু, দেশের শত্রু ও মানুষের শত্রু। মব আক্রমণে সরকার নীরব সমর্থন জোগালে বড় প্রতিবাদেরও হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

সমাবেশ থেকে আটটি দাবিও জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ওসমান হাদির হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করে দেশে স্থিতিশীলতা আনতে সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া এবং প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে আক্রমণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা।

সমাবেশে রংতুলি দিয়ে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড লিখছেন একজন অংশগ্রহণকারী
ছবি: প্রথম আলো।

পাশাপাশি সব ধর্ম পালন ও সব বিষয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাউল আবুল সরকারকে অবিলম্বে মুক্তি, মাজার-খানকা, ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সব হামলার তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার করা; সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ গড়ে তুলতে স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টিতে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনারও প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেন তাঁরা।

সমাবেশে অংশ নেন চলচ্চিত্র পরিচালক আকরাম খান, কবি জাহিদ মুস্তাফা, অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম, অধিকারকর্মী অরূপ রাহী, নির্মাতা রেদওয়ান রনি, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন প্রমুখ।