অর্গানিক খাবারের খোঁজে
চাল, তিন ধরনের ডাল, লাল আটা, চিনি এবং নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে দুটি বড় ব্যাগ ভর্তি করছিলেন সাব্বির নেওয়াজ। পেশায় চাকরিজীবী। থাকেন মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে। গত শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে শস্য প্রবর্তনার বিক্রয়কেন্দ্রে। এখানে জৈব পদ্ধতিতে বা অর্গানিক চাষাবাদের খাদ্যপণ্য বিক্রি হয়। এ প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদাও যথেষ্ট।
রাসায়নিক কীটনাশক বা সার প্রয়োগ না করে জৈব পদ্ধতিতে চাষের পণ্যই জৈব কৃষিপণ্য। দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। ভোক্তাদের মধ্যে সম্পন্ন ব্যক্তিরাই বেশি।
সাব্বির নেওয়াজ বলছিলেন, ‘দাম বেশি হলেও ভালো কিছু খাচ্ছি, এটুকু সান্ত্বনা। প্রতিদিন এ শহরে দূষিত বায়ু সেবন করতে হচ্ছে। সব দিকে ভেজাল। এর মধ্যে ভালো থাকতেই ভালো খেতে চাই।’
ভোক্তাদের এ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে জৈব কৃষিপণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে জৈব পদ্ধতির চাষাবাদের জমি এবং এর পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রয়কেন্দ্র।
এক দশক আগেও রাজধানীতে হাতে গোনা কয়েকটি খাদ্যপণ্য কিংবা খাবারের দোকান ছিল। এখন এ–জাতীয় খাদ্যশস্যের দোকান অনেক। পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে বনানী, গুলশান বা উত্তরার মতো এলাকায়ও এ ধরনের পণ্যের দোকান হয়েছে। এমন কিছু দোকানের নাম, ঠিকানা এবং সেখানে পাওয়া যায়, এমন পণ্যের তালিকা তুলে ধরা হলো:
শস্য প্রবর্তনা, মোহাম্মদপুর
প্রতিষ্ঠানটির তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে একটি মোহাম্মদপুরের ৬/৮, স্যার সৈয়দ রোডে। আরেকটি আছে মোহাম্মদপুরেরই রিং রোডের ২৯, প্রবাল রোডে। তৃতীয়টি আছে বনানীতে; ঠিকানা: বাড়ি-৪৩, ব্লক-এফ, সড়ক-১১।
শস্য প্রবর্তনায় এখন যেসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, এর মধ্যে আছে ১৩ ধরনের চাল। আছে বাঁশফুল চাল (১২০ টাকা কেজি), কার্তিকশাইল লাল চাল (কেজি ১২০), চিনিগুঁড়া পোলাও চাল (কেজি ১৬০), লাল বিন্নি চাল (কেজি ২২০ টাকা)।
আছে যবের ছাতু (২১০ কেজি), লাল আটা (১০০), বেসন (১৬০) ও লাল আতপ চালের গুঁড়া (১০০)।
প্রবর্তনায় পাওয়া আরও পণ্যের মধ্যে আছে বান্দরবানের আদা, কালিজিরা তেল, ছোলা বুট, তাহেরপুরী পেঁয়াজ, ভোজ্য নারকেল তেলসহ নানা পণ্য।
শস্য প্রবর্তনায় শীতের সময় চলে পিঠার আয়োজন। তবে এখন সকাল–বিকেলের নাশতায় আছে লুচি, আলুর দম, ফুচকা, তেল পিঠাসহ নানা খাবার।
ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/shashyaprabartana
ওয়েব ঠিকানা: https://shashyaprabartana.com/
মোবাইল: ০১৯১০-৯১১০০২
খামারবাড়ি, কাঁঠালবাগান
কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজারের কাছের অর্গানিক পণ্যের এই দোকানে শস্যের পাশাপাশি আছে গরুর দুধ। প্রতি লিটারের দাম ৯০ টাকা। তবে ন্যূনতম পাঁচ লিটার অর্ডার করতে হবে এবং ধানমন্ডি, কলাবাগান এলাকার হতে হবে। আছে প্রিমিয়াম ঘি, ৫০০ গ্রাম ৭৫০ টাকা। আছে মাখন, ৫০০ গ্রামের দাম ৪৪০ টাকা। আছে শর্ষের তেল, চাকের মধু, সুন্দরবনের খলিসা, চ্যাপা শুঁটকি, লইট্টা শুঁটকি, মরিচের গুঁড়া, তালমিছরি, শজনে পাউডার, আমসত্ত্ব, খেজুরের প্রিমিয়াম পাটালি গুড়। পাওয়া যায় কাজুবাদামসহ নানা ধরনের বাদাম।
ঠিকানা: ৬-ই, কাঁঠালবাগান বাজার, ঢাকা।
ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/khamarbari.rumi
মোবাইল: ০১৬৭০-৯৬৪২০৯
ও’ন্যাচারাল, বনানী
রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর এই দোকানে আছে দেশি-বিদেশি নানা পণ্যের সম্ভার। ফলের মধ্যে আছে ফুজি আপেল, গালা আপেল, পেয়ারা, কলা, নাশপাতি। পটোল, বেগুন, উচ্ছে, কচুর লতিসহ এমন কোনো তাজা সবজি নেই, যা এখানে মিলবে না। অপরিচিত পণ্যের মধ্যে আছে হাইড্রোনিক চেরি টমেটো, হাইড্রোনিক রক মেলন। মিষ্টির নানা পদ মিলবে এ দোকানে। আছে বালুসাই, ছানাদার গুড়ের সন্দেশ, টক দই, মিষ্টি দই, মালাই চপ, রসগোল্লা। ফরমালিনমুক্ত সামুদ্রিক মাছও আছে এখানে।
ঠিকানা: ৮০/এ, বি-ব্লক, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, বনানী, ঢাকা।
ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/onaturalbd
ওয়েব ঠিকানা: https://onaturalbd.com/
মোবাইল ও ফোন: ০১৩১৩-৩৪৯৯৯৯, ০৯৬১১-৬৭৮৫৭৮
প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র, সলিমুল্লাহ রোড
মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের দোকানটিতে আম, কাঁঠালের মতো মৌসুমি ফল থেকে শুরু দেশি নানা পদের চাল, মাছ, মধু, তেল, ঘি, নানা রকমের শাকসবজি পাওয়া যায়। সপ্তাহের বিভিন্ন দিন তাদের ফেসবুক পেজে কবে কোন পণ্যটি পাওয়া যাবে, তার নামধাম এবং দেশের কোত্থেকে আসবে, তা–ও উল্লেখ করা হয়। প্রাকৃতিক কৃষিতে পাহাড়ি নানা ফল ও ফসল পাওয়া যায়।
ঠিকানা: ৩/২৯ সলিমুল্লাহ রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/Prakritikkrishibk
মোবাইল: ০১৭৬০-১৫৫৭৫৩
জুম চাব, কাজীপাড়া
রাজধানীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুমখেতের ফসল পাওয়া যায়। এমন দোকান আছে কয়েকটি। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো ‘জুম’। মিরপুরের কাজীপাড়ায় এর অবস্থান (হেবাং রেস্তোরাঁর পাশে)। এখন এই বর্ষার সময় পাহাড়ি পণ্য বাঁশকোড়ল অনেকেই পছন্দ করেন। বাঁশকোড়লের পাশাপাশি মারফা, কলার থোড়, তিতা কচু, জুমের মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, লাউসহ অন্তত ৩০ ধরনের সবজি পাওয়া যায়। আছে পাহাড়ি মোরগ, হাঁস। এর পাশাপাশি জুমের চালও পাওয়া যায় কোনো কোনো সময়। আছে কলা, আম ও পেঁপে।
অনলাইনে অর্গানিক পণ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি হলো গ্রিন হাট। এখানে কালো বিরই চাল, কাটারিভোগ চাল, নানা ধরনের ডাল, মধু, ঘি, দেশি শুঁটকি, ঘরে তৈরি চিলি সস, সিরকা, আখের গুড় পাওয়া যায়। ঢাকা শহরের মধ্যে পণ্য পাঠাতে চার্জ নেওয়া হয় ৬০ টাকা।
ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/JumChab1
ফোন: ০১৮২৩-১৪৭৯৩১
গ্রেইনস অ্যান্ড গ্রিনস, সিলেট
ঢেঁকিছাঁটা লাল চাল (প্রতি কেজি ৯০ টাকা), ঢেঁকিছাঁটা লাল চিড়া (প্রতি কেজি ১৫০), ঢেঁকিছাঁটা বিরুন চাল (প্রতি কেজি ১৫০), ঢেঁকিছাঁটা চালের হাতে তৈরি মুড়ি (প্রতি কেজি ৮০), ঢেঁকিছাঁটা চালের গুঁড়া (প্রতি কেজি ৮৫ টাকা) পাওয়া যায়। এখানে প্রতি হালি দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া অর্গানিক শাকসবজি, কলা, সাতকরা, জারা লেবুসহ বিভিন্ন প্রজাতির মসলা পাওয়া যায়। অর্ডারকৃত সামগ্রী সাত দিনের মধ্যে দেশের ভেতরে যেকোনো ঠিকানায় কুরিয়ারে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ঠিকানা: প্রভাতী ১২/এ, লেচুবাগান, সিলেট সিটি করপোরেশন।
মোবাইল: ০১৭৩০২৫৪৩৭৭
সুন্দরবন পিওর মার্ট, খুলনা
খুলনা নগরের ময়লাপোতায় অবস্থিত বায়তুল আমান শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটের ১২ নম্বর দোকানটি হলো ‘সুন্দরবন পিওর মার্ট’। ০১৯৯০–৪৪৪১১০ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেও অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে ওই দোকান থেকে।
সেখানে সুন্দরবনের বিভিন্ন ধরনের মধু প্রতি কেজির দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। কালিজিরা ফুলের মধু ১ হাজার ২০০ টাকা, বরই ফুলের মধু ৮০০ টাকা। দোকানটিতে তালমিছরি, গাওয়া ঘি, কালিজিরার তেল, নারকেল তেল, আখের লাল চিনি পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, ধনিয়ার গুঁড়া ও জিরার গুঁড়াও বিক্রি হয়।
মোবাইল: ০১৯৯০–৪৪৪১১০
ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/sundarbanpuremart
সিফাত অ্যান্ড রিফাত অ্যাগ্রো, খুলনা
খুলনা থেকে বাড়িতে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে রেড ও ব্ল্যাক ঢেঁকিছাঁটা চাল বিক্রি করে ‘সিফাত অ্যান্ড রিফাত অ্যাগ্রো’। নগরের বয়রা আবাসিক এলাকার ১২৮ নম্বর বাড়িতে বসেই ওই ব্যবসা করেন মো. হাদিউজ্জামান। প্রতি কেজি রেড রাইস বিক্রি করেন ১০০ টাকা ও ব্ল্যাক রাইস বিক্রি করেন ১৫০ টাকায়। সারা দেশেই সরবরাহ করেন। ০১৯২৮৫১২৮৭৮ নম্বরে যোগাযোগ করে চাল সংগ্রহ করা যাবে।
[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও খুলনা]