২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল ও ৭ আসামির যাবজ্জীবন, খালাস পেলেন ১১ জন

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে দুই দশকের বেশি সময় আগে আওয়ামী লীগের চার কর্মীকে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৩ আসামির মধ্যে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর অপর ১১ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আর আগেই তিন আসামির মৃত্যু হওয়ায় তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার, এম এম শাহজাহান, এ কে এম ফজলুল হক খান প্রমুখ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারিক আদালতের রায়ে ২৩ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। হাইকোর্ট দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। ৭ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অপর ১১ জনকে খালাস দিয়েছেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’  

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন জহিরুল হক ভূঁইয়া ওরফে জহির মেম্বার ও আব্দুল আহাদ। মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামি হলেন ফারুক, খোকন, মো. ডালিম, মো. রোহেল, লিয়াকত আলী মাস্টার, আল আমিন ও রুহুল আমিন। খালাসপ্রাপ্ত ১১ জন হলেন সিরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ, সাহাব উদ্দিন, মো. হালিম, ইয়াকুব আলী, মো. আমির হোসেন, মো. আবুল কালাম, মো. রফিক মিয়া, গোলাম আজম, আবদুল হাই, হারুন ও তাজুদ্দিন।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, আসামিদের মধ্যে হারুন ও তাজুদ্দিন পলাতক। ২৩ আসামির মধ্যে তিন আসামি মারা গেছেন। তাঁরা হলেন আড়াইহাজার উপজেলার সদাসদি ইউনিয়ন বিএনপির তৎকালীন সভাপতি আবুল বাশার ওরফে কাশু, ইউনুছ আলী মেম্বার ও ইদ্রিস আলী। তাই মৃত্যুর আগে তাঁদের করে যাওয়া আপিল ও জেল আপিল চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বাদ দেওয়া হয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০২ সালের ১২ মার্চ সকালে তৎকালীন বিএনপি নেতা আবুল বাশারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কর্মী বারেক, তাঁর ফুফাতো ভাই বাদল এবং ওমর ফারুক ও কবীরকে বাড়ি থেকে নিয়ে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত বারেকের বাবা আজগর আলী বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আবুল বাশারকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০২ সালে ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এই মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক কামরুন নাহার রায় দেন। রায়ে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

এর আগে ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবুল বাশারসহ কয়েকজন আসামি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) জন্য রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে আসে এবং ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে ২০১৭ সালে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের জেল আপিল ও আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।