বিমানের আরেকটি নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন, তদন্তে কমিটি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস
ফাইল ছবি

আবারও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি কেন্দ্রের তিন হাজার পরীক্ষার্থীর অনেকে অভিযোগ করেছেন, ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। যদিও বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। তবে এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত শুক্রবার রাজধানীর ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট’ পদে লিখিত পরীক্ষা নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। তবে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় একটি কেন্দ্রের তিন হাজার পরীক্ষার্থী এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রতিবাদে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভও করেন তাঁরা।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে এর আগেও একাধিকবার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গত বছরের ২১ অক্টোবর ১০টি পদের জন্য নেওয়া একটি লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পরে সেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

সেবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হলে বিমানের ১০ জনের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, এবার গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ১০০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে আবেদন পড়েছিল ৩৩ হাজার। গত শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু বেলা দুইটার দিকে পরীক্ষার্থীদের জানানো হয়, তিনটা নয়, পরীক্ষা শুরু হবে বিকেল চারটা থেকে।

পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষার দিন ভোর থেকে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছিল। প্রশ্নপত্র তৈরি, তা ছাপানো ও ফটোকপি করাসহ পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে বিলম্ব হয়েছে। এ জন্য পরীক্ষা শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষা শুরুর সময় পিছিয়ে দেওয়ার তথ্য ১০টি কেন্দ্রে আগেই জানানো হয়। মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তা জানানো হয়। এর মধ্যে ৯টি কেন্দ্রে পরিবর্তিত সময়ে পরীক্ষা দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তিন হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা না দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আরও পড়ুন

ওই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা পেছানোর নেপথ্যে দুরভিসন্ধি রয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাও ঘটতে পারে। এসব কারণে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষা এক ঘণ্টা পেছাতে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, সেখানে কারও স্বাক্ষর বা তারিখ দেওয়া ছিল না। এতে সন্দেহ আরও বাড়ে। কয়েক হাজার পরীক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি না খেলে আবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

সূত্র বলছে, পরীক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে সেদিন পুলিশ ডেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় পরে পরীক্ষা না নিয়েই কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা চলে যান।

সেদিন কী ঘটেছিল, তা তদন্তে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। দুই সদস্য হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গ্রাহক সেবা পরিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মতিউল ইসলাম চৌধুরী এবং মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মেজর মাহমুদুল হাসান। কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিমানের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) ছিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন পরীক্ষার সময় পিছিয়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের হাতে বিকল্প ছিল না। প্রশ্নপত্র ফাঁস এড়াতেই ভোর থেকে প্রশ্ন প্রণয়নের কাজ করা হয়। এরপর যানজটের কারণে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছাতেও দেরি হয়।’

ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। একটি কেন্দ্রে কী কারণে পরীক্ষা নেওয়া গেল না, এতে কার গাফিলতি ছিল, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষা বাতিল হবে নাকি বহাল থাকবে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই সে সিদ্ধান্ত হবে।

সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে জাপানের নারিতা রুটে বিমানের একটি ফ্লাইট চালু করতে বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম। তাঁরা দেশে না থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষা আবার নেওয়া হবে কি না, তাঁরা ফিরলে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, একটি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের কেন বিষয়টি বোঝানো গেল না, কেন তাঁরা হট্টগোল করলেন, তা জানা দরকার। পরীক্ষার্থীরা কেন কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করলেন, সে কারণও বের করা জরুরি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে গত কয়েক বছরের বাজে অভিজ্ঞতার কারণে এবার প্রশ্ন প্রণয়নে তাঁরা বেশ সতর্ক ছিলেন। তবে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া কঠিন বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন