মিসর: সুয়েজ খালের তীরে সাম্রাজ্যবাদের পতন

মিসরের জাতীয় পতাকা
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এ বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

ডিসেম্বর মাস বিশ্বজুড়ে মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে, আর নীল নদের দেশ মিসরের জন্য এই মাস সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মাস। আমাদের ধারাবাহিক আয়োজনে আমরা স্মরণ করব ১৯৫৬ সালের সেই উত্তাল দিনগুলোকে, যখন মিসরীয়রা বিশ্বের পরাশক্তিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। মিসরের ইতিহাসে এ বিজয় ‘সুয়েজ বিজয়’ বা পোর্ট সাইদের প্রতিরোধ যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত।

১৯৫৬ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। এই খাল ছিল পশ্চিমাদের অর্থনীতির লাইফলাইন। নাসেরের এ সাহসী সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরায়েল যৌথভাবে মিসর আক্রমণ করে। ইতিহাসে এটি ‘ত্রিপক্ষীয় আগ্রাসন’ নামে কুখ্যাত। কিন্তু তারা মিসরের সাধারণ মানুষের দেশপ্রেমের কথা ভুলে গিয়েছিল। বিশেষ করে পোর্ট সাইদ শহরের মানুষ আধুনিক ট্যাংকের সামনে খালি হাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে কায়রোয় উল্লসিত জনতার মধ্যে মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ডিসেম্বর মাসেই এ যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ ও মিসরীয়দের অদম্য প্রতিরোধের মুখে আগ্রাসী বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনারা সুয়েজ এলাকা ছাড়তে শুরু করেন এবং ২৩ ডিসেম্বর চূড়ান্তভাবে পোর্ট সাইদ ত্যাগ করেন। মিসরের এ বিজয় ছিল আধুনিক আরব জাতীয়তাবাদের এক বড় উত্থান। এটি প্রমাণ করেছিল যে কামানের গোলার চেয়ে দেশের মানুষের ইচ্ছাশক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী।

বিশ্বমানচিত্রে মিসর

আজকের দিনে সুয়েজ খালের তীরে দাঁড়িয়ে মিসরীয়রা সেই বীর শহীদদের স্মরণ করেন, যাঁরা নিজেদের রক্ত দিয়ে খালটিকে বিদেশি দখলমুক্ত রেখেছিলেন। পোর্ট সাইদে এ বিজয় উপলক্ষে বর্ণিল উৎসব হয়। মিসরের এ বিজয়গাথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মতোই শোষণ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এক জ্বলন্ত মশাল। মিসর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ালে বিজয় সুনিশ্চিত, তা শত্রু যত বিশালই হোক না কেন।