অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতরা চাইলেন বিচার–মর্যাদা–সংস্কার

‘জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মিলন’–এ উপস্থিত অতিথি ও শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধারা। শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনেছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বছর পেরোলেও বিচার ও মর্যাদা না পাওয়ায় এবং সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধারা। শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মিলন’–এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। এই সময় তাঁরা ক্ষোভ ও কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।

গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সম্মিলনের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণসংহতি আন্দোলন এ তথ্যগুলো জানিয়েছে।

এই সম্মিলন থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও হামলার বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

সম্মিলনে শহীদ মনির হোসেনের স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, এক বছর হয়ে গেলেও এখনো তিনি স্বামীর লাশ পাননি।

এক বছর কেউ মনে রাখেনি বলে অভিযোগ করেন জুলাই শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা। তাঁর প্রশ্ন, এক বছর পর মনে পড়ল? জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, শহীদ পরিবার এখনো স্বীকৃতি পায়নি। এখনো বিচার হয়নি।

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাতির স্বার্থে সবাইকে এক থাকতে হবে। যত মতভেদ থাকুক, দেশের সংস্কারের জন্য একমত থাকতে হবে। নির্বাচনের আগেই যেসব সংস্কার সম্ভব, সেগুলো করে ফেলা জরুরি। আগামী নির্বাচনে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি হলে ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শহীদ সানির মা রহিমা বেগম বলেন, তিনি এমন একটি দেশ চান, যেখানে আর কেউ শেখ হাসিনার মতো হতে পারবে না। শেখ হাসিনার আমলের মতো শহীদ বা আহত ব্যক্তিদের চৌদ্দগোষ্ঠীর চাকরি চান না।

এখনো যে বেঁচে আছেন, এটা বোনাস—বলে মন্তব্য করেন আহত জুলাই যোদ্ধা নাহিদ হাসান।

‘জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মিলন’–এ বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

৫ আগস্টের আগে বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির দাবি

জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এই সম্মিলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও তাঁর দল এই রক্তের ঋণ মনে রাখবে। রাজনীতিতে এই রক্তের সঙ্গে বেইমানি শুরু হলে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন তাঁরা।

এত দিনেও কেন জুলাই শহীদদের মর্যাদা নিশ্চিত করা হলো না, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সেই প্রশ্ন রাখেন জোনায়েদ সাকি। কত দিনের মধ্যে ও কীভাবে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হবে, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে এবং তাঁদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়া হবে, এসব বিষয়েও সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ৫ আগস্টের আগেই ন্যায়বিচারের যথাযথ দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চান তিনি। অর্থনীতির পুনর্গঠন, জনগণের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জীবনের সংকটের সমাধান করতে হবে।

এই সম্মিলনে দৃকের প্রতিষ্ঠাতা ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, যাঁরা এখন সরকারে রয়েছেন কেউ বুক পাতেননি, কেউ গুলি খাননি। যাঁরা বুক পেতেছেন, তাঁদের সম্মান নিশ্চিত না করলে ইতিহাসে বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদ বলেন, শহীদ পরিবার বিচার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা এখনো হয়নি। এসব দুঃখজনক।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমজীবী মানুষেরা উপেক্ষিত হয়েছেন বারবার। নতুন বাংলাদেশে এই উপেক্ষা আর দেখতে চান না।

এই সম্মিলনে বক্তব্য দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা উমামা ফাতেমা, শহীদ মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়ার (ফারহান ফাইয়াজ) বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।