বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের বিরুদ্ধে নিরীক্ষা আপত্তির কথা জানাল বিএসএমএমইউ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা নিরীক্ষা বা অডিট আপত্তির কথা গণমাধ্যমকে জানাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।
বিএসএমএমইউ আজ মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণের সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যয় হয়েছে ৬৬ কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিজেদের ভেতরকার কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ এই বিজ্ঞপ্তি।
প্রকল্পের কাজের নিরীক্ষা হওয়া একটি প্রচলিত পন্থা। নিরীক্ষায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসংগতি ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে উঠে আসা আপত্তি অনেক সময় সংস্থার পক্ষ থেকে জবাব দেওয়ার পর নিষ্পত্তি হয়ে যায়। আবার অনেক সময় নিরীক্ষা আপত্তি টিকে থাকে। সেটা অনিয়ম হিসেবে গণ্য হয়।
সরকারি সংস্থাগুলো সাধারণত নিরীক্ষা আপত্তি গোপন করে। কিন্তু বিএসএমএমইউ নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা নিরীক্ষা আপত্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার করল।
বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন বিএসএমএমইউর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার। তাতে লেখা, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে’ তিনি এই বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিষয়টি (নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়গুলো) গভীরভাবে খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার এই প্রতিবেদককে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তাদের নির্দেশেই তিনি বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন।
বিএসএমএমইউতে জনসংযোগ কর্মকর্তার কার্যালয় থাকার পরও একটি পৃথক ‘মিডিয়া সেল’ তৈরি করেছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনার সব ধরনের ছাপার কাজ নিয়ন্ত্রিত হয় এই মিডিয়া সেল থেকে। মিডিয়া সেল নিয়ন্ত্রিত হয় উপাচার্যের কার্যালয় থেকে। তবে মিডিয়া সেলের কেউ কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপাচার্যের উদ্যোগেই বিজ্ঞপ্তিটি লেখা হয়েছে এবং তাঁর কথাতেই তদন্ত কমিটি হয়েছে।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অডিট আপত্তি একটা এসেছে প্রজেক্টের বিরুদ্ধে। আমি তো প্রশান্তকে বলেছিলাম (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি) না দেওয়ার জন্য। বিষয়টি কী আমি একটু দেখে নিই।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়মবহির্ভূত ব্যয়, সরকারি ক্রয় বিধিমালা অনুসরণ না করে কেনাকাটা, ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও আয়কর কর্তন না করা, ব্যাংক মাশুল (চার্জ) না দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬৬ কোটি ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৭ টাকার নিরীক্ষা আপত্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনা শাখা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই নিরীক্ষা আপত্তি দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক মো. জুলফিকার রহমান খানের বিরুদ্ধে। তিনি তখন প্রকল্প পরিচালক ছিলেন।
জুলফিকার রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অডিটে যেসব আপত্তি উঠেছে, আমি তার সবগুলোরই জবাব দিয়েছি। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হওয়ার সময়ও পার হয়ে যায়নি। তা এখনো প্রক্রিয়াধীন।’ তা হলে বিশ্ববিদ্যালয় এমন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিল কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একদম বিনা কারণে মানুষের কাছে আমাকে হেয় করার জন্য।’
বিএসএমএমইউর দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কয়েকজন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার সমর্থনপুষ্ট। তাঁরা নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপদলীয় দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকেন। আজকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি এমনই একটি উদাহরণ।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ঘটনা দেখতে চাই না।’