যেকোনো সংকটে নারীর দুর্ভোগ আরও বাড়ে

যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, সংকট, যুদ্ধ ও সংঘাতে নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য থাকায় সংকটগুলো আরও তীব্র আকার ধারণ করে। নারীর জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে ব্যক্তিজীবনে নারীর প্রতি এসব বৈষম্যের নিরসন করতে হবে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৯-২২) বাস্তবায়নে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নারী সংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয় সংলাপ’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ইউএন উইমেনের সহায়তায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এই সংলাপের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বলা হয়, কোভিডের কারণে কর্মপরিকল্পনার কাজে অগ্রগতি কম হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া কর্মপরিকল্পনার কর্মসূচিগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার আওতাভুক্ত করা এবং সে অনুযায়ী জাতীয় বাজেটেও অন্তভু৴ক্ত করার জন্য পরিপত্র জারি করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার সমন্বয়ের দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর। জাতিসংঘে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে সমাজে সম্প্রীতি বজায় রাখা, উগ্রবাদ ও লিঙ্গবৈষম্য প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে নেওয়া উদ্যোগগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপকভাবে যুক্ত করা, শান্তি ও সুরক্ষায় নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক সংকটময় পরিস্থিতিতে নারীর অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার তিন বছর মেয়াদি এ কর্মপরিকল্পনা নেয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, নারীর অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। নারী নির্যাতন রোধেও সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটে। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা সম্ভব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কোভিডে কাজে অগ্রগতি কম হওয়ায় কর্মপরিকল্পনার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়েছে। এরপরও যেকোনো সংকটে নারীদের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা যায়। কোভিডের সময় দেশে পারিবারিক সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ বাড়তে দেখা গেছে।

ইউএন ওমেনের এদেশীয় উপ–প্রতিনিধি দিয়া নন্দা বলেন, শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ এবং বসবাস উপযোগী বিশ্ব গড়তে এই ইস্যু নিয়ে কাজ করা জরুরি। এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নারীর অবস্থান শক্তিশালী হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার নার্দিয়া সিম্পসন বলেন, বাংলাদেশের নারীরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছেন। নারী, শান্তি ও নিরাপত্তায় নেওয়া জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় সামাজিক সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণের গুরুত্ব অনেক।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনপিএসের উপপরিচালক শাহনাজ সুমী। কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন ইউএন উইমেনের পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন বিশ্লেষক তানিয়া শারমীন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রিসার্চ ইনেশিয়েটিভ বাংলাদেশ (রিব)–এর নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা (অনলাইনে), জেন্ডার বিশেষজ্ঞ শিপা হাফিজা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, পুলিশের বিশেষ শাখার উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আমেনা বেগম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা) আনিকা রাইসা চৌধুরী প্রমুখ। সংলাপে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ অনুবিভাগ) তৌফিক ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, সমাজে নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য চলমান আছে। একটি গোষ্ঠী নারীর বিরুদ্ধে কাজ করে। নারী, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) এবং সংবিধানের সমতা সৃষ্টির যে দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে, তা পালন করা হবে।