এসি হোক বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী
কাঠফাটা গরমে একটু স্বস্তির জন্য এয়ারকন্ডিশনার বা এসির দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। যাঁরা এত দিন এসি ব্যবহার করেননি, তাঁরাও ভাবছেন ঘরে নতুন এসি আনার ব্যাপারে। কেউ আবার ভুগছেন সিদ্ধান্তহীনতায়—মাস শেষে মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল সামলাবেন কীভাবে! এ রকম ভাবনার মধ্যে যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য এসির বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নানা কৌশল এবং বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী এসির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন হায়ার এয়ার সলিউশনসের হেড অব প্রোডাক্ট মুহাম্মদ মুনীম।
মুহাম্মদ মুনীম বলেন, ‘বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী বলতে এখন আমরা বুঝি ইনভার্টার এসি। এই এসিগুলো ইনভার্টার প্রযুক্তিসমৃদ্ধ, যা প্রথমে পূর্ণশক্তিতে চালু হয়। এরপর ঘরের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক করে, সেই সময়ে এসিটি শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। এই কম শক্তিতে চলার কারণে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় কম। ইনভার্টার এসির বড় সুবিধা হচ্ছে, এসির কমপ্রেসর মোটরটি নিজস্ব চলার গতি প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে পারে।
এই এসিতে এমন একটি সেন্সর থাকে, যা ঘরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কমপ্রেসর পুরোপুরি বন্ধ না করে এসির মোটরটির চলার গতি কমিয়ে দেয়। এর ফলে বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে। অন্যদিকে সাধারণ এসির কমপ্রেসর বারবার চালু-বন্ধ হয় বলে বিদ্যুৎ খরচও হয় বেশি।’
মুহাম্মদ মুনীম আরও বলেন, ভাবছেন আমার ঘর ছোট, ইনভার্টার এসি কেনা যাবে কি না? এমন ভাবনায় যাঁরা আছেন, তাঁরা নিশ্চিন্তে কিনে ফেলতে পারেন এই প্রযুক্তির এসি। কারণ, যেকোনো আয়তনের কক্ষের জন্য ইনভার্টার এসি ব্যবহার করা যায়। ছোট কক্ষ অপেক্ষা বড় কক্ষের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা বেশি হলেও ঠিকই অন্য এসির তুলনায় ইনভার্টার এসিতে বিদ্যুৎ খরচ খুব কম হয়।
এ ছাড়া এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়—
সর্বনিম্ন তাপামাত্রায় চালু না রাখা
এসি কখনোই সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় চালু রাখা যাবে না। অনেকেই মনে করেন, বেশি গরম লাগলে ঘর সর্বাধিক শীতল রাখতে এসি ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা যাবে, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ব্যুরো অব এনার্জি এফিসিয়েন্সির এক তথ্য অনুযায়ী, মানবদেহের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সুতরাং এসিকেও সেই তাপমাত্রায় রাখতে হবে। এতে শরীর যেমন ভালো থাকবে, তেমনি এসিতে বিদ্যুৎ খরচও কম হবে।
টাইমার ব্যবহার
সব এসিতেই টাইমার থাকে। এর সাহায্যে সারা রাত এসি না চালিয়ে নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত চালানো যেতে পারে। রাতে ঘুমানোর সময় অনেকক্ষণ এসি চললে রুম এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে থাকে। তাই টাইমার সেট করে রাখা শরীরের জন্য ভালো। এভাবে টাইমার সেট করে দিলে নির্দিষ্ট সময় পর এসি বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে বিদ্যুৎ কম খরচ হবে।
সময়মতো সার্ভিসিং করানো
যত্নে ভালো থাকে জিনিস। সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কিছুদিন পরপর সার্ভিসিং করানো প্রয়োজন। এসির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সারা বছর এসি ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ করে শীতকালে। এর ফলে এতে ধুলাবালু জমে থাকে। এ কারণে মেশিনে সমস্যা তৈরি হয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে।
দরজা–জানালা বন্ধ রাখা
এসি ব্যবহারের অন্যতম শর্ত হলো ঘরের দরজা–জানালা বন্ধ করে চালানো। জানালা-দরজা বন্ধ রেখে এসি চালালে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হয়। বিদ্যুৎও সাশ্রয় হয়।
বন্ধ রাখতে হবে পাওয়ার সুইচ
ইলেট্রনিক ডিভাইস অপ্রয়োজনে চালিয়ে রাখা উচিত নয়। এটি শুধু এসির ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই যন্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন না থাকলে পাওয়ার সুইচ বন্ধ করতে হবে। সম্ভব হলে প্লাগও খুলে রাখতে হবে। অধিকাংশ মানুষই শুধু রিমোট দিয়ে এসি বন্ধ করে রাখেন। এটি করা উচিত নয়। কারণ, কম্প্রেসর নিষ্ক্রিয় থাকলেও পাওয়ার সুইচ চালু থাকলে প্রচুর শক্তি অপচয় হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।
আরও পড়ুন:
ঘরে আসবে নতুন এসি?
এসির নতুন ব্যবহারকারী? তাহলে জেনে নিন…
এসির যত ধরন ও বৈচিত্র্য
জীবনে স্বস্তি এনেছে এসির যে প্রযুক্তি