সহিংসতায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভ চলাকালে যাঁরা সহিংসতা চালিয়েছেন এবং যাঁরা এসব সহিংসতার নির্দেশ দিয়েছেন—দুই পক্ষকে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া গত বুধবার নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে।

শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যাচাই করেছে ‘বিবিসি আই’, যা বুধবার বিবিসি প্রকাশ করে। এখান থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন। অজ্ঞাতপরিচয় একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি এই আলাপ করেছিলেন।

বুধবার বিবিসির এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফেসবুকে বিবৃতিটি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া। এতে বলা হয়েছে, বিবিসি একটি অডিও রেকর্ডিং যাচাইয়ে নিশ্চিত হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভ চলাকালে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আবারও (বাংলাদেশের) কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন সহিংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের একটি তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালের আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, ‘নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষই মিলিটারি রাইফেল ও শটগান থেকে ছোড়া প্রাণঘাতী ধাতব ছররা গুলির আঘাতে মারা গেছেন। এ ধরনের গুলি সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ব্যবহার করে। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষও গুরুতর আহত হয়েছেন, যাঁদের অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।’

আরও পড়ুন

লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা সহিংসতা চালিয়েছেন এবং যাঁরা নির্দেশ দিয়েছেন, উভয় পক্ষকে নিরপেক্ষ বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারের সব পর্যায়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মানতে হবে। কোনোভাবেই যেন মৃত্যুদণ্ডকে আশ্রয় করা না হয়, তা–ও নিশ্চিত করতে হবে।

পাশাপাশি ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রোম স্ট্যাটিউটের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের আলোকে এ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনেও এই সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

রোম স্ট্যাটিউট হলো একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা ১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই ইতালির রোম শহরে গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি যুদ্ধ অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও আগ্রাসন অপরাধের বিচার করে।

বিবিসি আইয়ের যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তাঁরা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাঁদের (আন্দোলনকারী) পাবেন, গুলি করবেন।’

ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানে, এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপ করেন।

আরও পড়ুন