দুর্ঘটনা এড়াতে উল্টো পথে ১৮ কিলোমিটার গেল ট্রেন

পটিয়া রেল স্টেশনফাইল ছবি

পরপর স্টেশনে আসে বিপরীতমুখী দুটি ট্রেন। একটি ট্রেন স্টেশনের বাড়তি লাইনে (লুপ লাইন) নেওয়ার পরও এর কয়েকটি বগি মূল লাইনে থাকায় কিছুতেই অন্যটি পার হতে পারছিল না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে একটি ট্রেনকে যেতে হয় পেছনের দিকে। এক হাজার যাত্রীসহ উল্টো পথে ট্রেনটিকে ১৮ কিলোমিটার দূরের আরেকটি স্টেশনে নেওয়ার পর সুরাহা হয় সংকটের। ওই স্টেশনে পরস্পরকে অতিক্রম করে ট্রেন দুটি।

গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের পটিয়া রেলস্টেশনে ঘটেছে এ ঘটনা। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে পটিয়ায় কর্মরত স্টেশন মাস্টার (ডেপুটেশন) কাঞ্চন ভট্টাচার্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, পাহাড়তলীর নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও স্টেশনমাস্টারের ভুলে এমনটি ঘটেছে। দুটি ট্রেন একসঙ্গে পটিয়া স্টেশনে আসায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা ২টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস পটিয়া স্টেশনে পৌঁছে। ২০টি বগির ট্রেনটিতে করে রেল পূর্বাঞ্চলের কিছু কর্মকর্তা কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। অন্যদিকে কক্সবাজার স্টেশন ছেড়ে আসা কক্সবাজার এক্সপ্রেস পটিয়া স্টেশনে পৌঁছায় ২টা ৪০ মিনিটে। ওই ট্রেনে ২২টি বগি ছিল।

ট্রেন দুটি স্টেশন অতিক্রম করানোর উদ্দেশ্যে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে স্টেশনের লুপ লাইনে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে পর্যটক এক্সপ্রেসের তিনটি বগি মূল লাইনে পড়ে থাকায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস অতিক্রম করতে পারেনি। কক্সবাজার এক্সপ্রেসের বগি আরও বেশি হওয়ায় সেটিকেও লুপ লাইনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। এ অবস্থায় দুর্ঘটনা এড়াতে কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে উল্টো পথে দোহাজারী স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। দোহাজারী স্টেশনে ট্রেন দুটি পরস্পরকে অতিক্রম করে। কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটি সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছে। অন্যদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছে পর্যটক এক্সপ্রেস।

রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পটিয়া স্টেশনে থাকা লুপ লাইনে সর্বোচ্চ ১৭টি বগি রাখা যায়। পাহাড়তলীর নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত ছিল। তাঁর অনভিজ্ঞতা এবং দায়িত্ব অবহেলার কারণে পটিয়া স্টেশনে দুটি ট্রেন একসঙ্গে পার করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্টেশনমাস্টারও এ বিষয়ে তাঁর যথাযথ দায়িত্ব পালন করেননি।

দায়িত্বে অবহেলায় বরখাস্ত হওয়া স্টেশনমাস্টার কাঞ্চন ভট্টাচার্য বলেন, তিনি নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও দায়িত্বরত প্রকৌশলীর সঙ্গে আলাপ করে দুটি ট্রেন স্টেশন অতিক্রম করানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রকৌশল বিভাগ ট্রেন অতিক্রমের অনুমতি দেওয়ায় তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। নিয়ন্ত্রণকক্ষের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি তাঁর দায়িত্বে কোনো অবহেলা করেননি।

রেল পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।