কৈশোর স্বাস্থ্য নিয়ে জানতে-বুঝতে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ চালু
শারীরিক, মানসিক পরিবর্তনের সময় কিশোর–কিশোরীদের নিজেদের নিয়ে জিজ্ঞাসা থাকে অনেক। বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে। তারা যেমন অভিভাবকদের কাছে এসব বিষয় জানতে চাইতে কুণ্ঠা বোধ করে, তেমনি অভিভাবকেরাও অনেক সময় খোলা মনে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। আর এভাবেই জানার বাইরে থেকে যায় কৈশোর স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো। তাই কৈশোর স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং কিশোর–কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য ও সেবার সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চালু হয়েছে ‘কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য’ ওয়েবসাইট ও মুঠোফোন অ্যাপ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য সম্মেলনে ওয়েবসাইট https://adoinfo.dgfp.gov.bd/bn ও অ্যাপের উদ্বোধন করা হয়। সুইডিশ দূতাবাস ও ইউনিসেফের সহায়তায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ওয়েবসাইট ও অ্যাপে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার, পুষ্টি, সহিংসতা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত শিক্ষামূলক ও জেন্ডারভিত্তিক নির্দেশিকা ও কোর্সের পাশাপাশি কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে ও কোথায় পাওয়া যায়, তা উল্লেখ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশে কিশোর–কিশোরীর সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি। তারা তাদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা ও তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা ধরনের সামাজিক বাধার সম্মুখীন হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে সমাজে সচেতনতার অভাব, নেতিবাচক ধ্যানধারণা ও কুসংস্কার রয়েছে। ফলে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে ছেলেমেয়েদের বিশ্বাসযোগ্য ও প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ওয়েবসাইট ও অ্যাপে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার, পুষ্টি, সহিংসতা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত শিক্ষামূলক ও জেন্ডারভিত্তিক নির্দেশিকা ও কোর্সের পাশাপাশি কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে ও কোথায় পাওয়া যায়, তা উল্লেখ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কিশোর–কিশোরীরা দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশকে ভালো রাখতে হলে কিশোর–কিশোরীদের সঠিক ও নিরাপদভাবে বড় হতে দিতে হবে। তাদের সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অনেক পদক্ষেপের মধ্যে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ চালু অন্যতম উদ্যোগ। অভিভাবকেরা যেসব বিষয় নিয়ে খোলামনে কথা বলতে পারেন না, সেসব বিষয়ে জানাতে সন্তানদের এই ওয়েবসাইট ও অ্যাপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। তবে অ্যাপ থেকে পাওয়া তথ্য যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়, সেদিকে অভিভাবকদের নজর রাখতে বলেন মন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, বয়োসন্ধিকাল হলো একটি রূপান্তরের সময়। ওয়েবসাইট ও অ্যাপটি কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে।
ঢাকায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন দেশে বহু বছর ধরে কৈশোর স্বাস্থ্য অবহেলিত বিষয় ছিল। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কিশোর–কিশোরীরা ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক, সেটা বিবেচনায় রেখে কৈশোর স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো.সাইফুল হাসান বাদল বলেন, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই বয়সী কিশোর–কিশোরীদের সঠিক পথে পরিচালনার দায়িত্ব প্রত্যেকের পালন করা উচিত।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিটউটের (নিপোর্ট) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান বাল্যবিবাহ কমাতে কৈশোর স্বাস্থ্য নিয়ে কিশোর–কিশোরীদের শিক্ষা দান করার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু। তিনি ওয়েবসাইট ও অ্যাপটি প্রচারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, ওয়েবসাইট ও অ্যাপের কথা প্রচার করতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কিশোর–কিশোরী ক্লাব, বন্ধু–দল ও শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।
অনুষ্ঠানে কৈশোর স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মনজুর হোসেন। অনুষ্ঠানে কিশোর–কিশোরীরা নাচ এবং উত্ত্যক্ত, যৌন হয়রানি ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক নাটক পরিবেশন করে। এ ছাড়া দিনব্যাপী আয়োজনে কুইজ প্রতিযোগিতায় ১০ জন বিজয়ী কিশোর–কিশোরীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।