দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসার বিষয়ে তাঁর ছেলে মাসুদ সাঈদী অবগত: বিএসএমএমইউ
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসার সার্বিক বিষয়ে তাঁর ছেলে মাসুদ সাঈদী অবগত ছিলেন। তাঁর চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকেরা সঠিকভাবে তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ বুধবার বিকেলে বিএসএমএমইউর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত সোমবার রাতে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছিলেন। মৃত্যুর পর সাঈদীর পরিবারের সদস্য ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে নিতে চাইলে তাতে বাধা দিয়েছিলেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। রাতভর এ নিয়ে উত্তেজনা-অচলাবস্থার পর মঙ্গলবার ভোররাতে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে জামায়াতের ওই সব নেতা-কর্মীকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর সাঈদীর লাশ বিএসএমএমইউ থেকে পিরোজপুরে নিয়ে দাফন করা হয়। এর মধ্যে সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া বিএসএমএমইউর একজন অধ্যাপককে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল, যা আজ বেলা ৩টায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনিবার্য কারণে এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করে।
পরে বিএসএমএমইউয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ১৩ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে (৮৪ ) জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। তাঁকে ভর্তি করে চিকিৎসা কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলেছে, এরপর ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে সাঈদীর হঠাৎ ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়। অ্যাডভান্স কার্ডিয়াক লাইফ সাপোর্ট প্রটোকল অনুযায়ী তাঁর চিকিৎসা চলতে থাকে। কিন্তু রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সাঈদীর চিকিৎসায় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকরা সঠিকভাবে তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, সাঈদীর রোগের গতিপ্রকৃতি, চিকিৎসা ও সম্ভাব্য পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে তাঁর ছেলে মাসুদ সাঈদী সম্যকভাবে জ্ঞাত আছেন।
২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে সে সময় জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। পরে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেন ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। সেই রায়ে সাজা কমিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এত দিন ওই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।