হাঙ্গেরি: স্বাধীনতা যখন বারবার ফিরে আসে

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

হাঙ্গেরির জাতীয় পতাকা

বিজয় মানেই একবারের লড়াই নয়; কখনো কখনো বিজয় মানে ধ্বংসস্তূপ থেকে বারবার উঠে দাঁড়ানো। আজ ২২ ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাসের এই আয়োজনে আমরা দৃষ্টি ফেরাব মধ্য ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরির দিকে। যদিও হাঙ্গেরির ক্যালেন্ডারে আনুষ্ঠানিক জাতীয় দিবস বা বিপ্লব দিবস ভিন্ন তারিখে পালিত হয়, কিন্তু ডিসেম্বর মাস তাদের ইতিহাসে মুক্তির এক সন্ধিক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৪৪ সালের এই সময়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় অবরুদ্ধ বুদাপেস্টে স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছিল।

বুদাপেস্টের স্ট্যাচু অব লিবার্টি

হাঙ্গেরির ইতিহাস বারবার বিদেশি আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। কখনো অটোমান, কখনো অস্ট্রিয়ান হাবসবুর্গ, আবার কখনো নাৎসি জার্মানি বা সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে নাৎসি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা যখন বুদাপেস্টকে দুর্গে পরিণত করেছিল, তখন হাঙ্গেরির সাধারণ মানুষ ছিল জিম্মি। সোভিয়েত রেড আর্মি শহরটি ঘিরে ফেলেছিল, শুরু হয়েছিল ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী ‘সিজ অব বুদাপেস্ট’। এ লড়াই চলেছিল প্রায় ৫০ দিন। কিন্তু এই ধ্বংসলীলার মধ্যেও হাঙ্গেরির মানুষের মনে ছিল মুক্তির স্বপ্ন।

যুদ্ধ শেষে নাৎসিদের কবল থেকে মুক্তি মিললেও হাঙ্গেরি পরে সোভিয়েত–বলয়ে আটকে পড়ে। কিন্তু হাঙ্গেরীয়রা দমে যায়নি। ১৯৫৬ সালের হাঙ্গেরীয় বিপ্লব বিশ্বকে দেখিয়েছিল তাদের সাহসিকতা। যদিও সেই বিপ্লব দমন করা হয়েছিল, কিন্তু ১৯৮৯ সালে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কমিউনিজমের পতন এবং গণতান্ত্রিক হাঙ্গেরির জন্ম প্রমাণ করে, মানুষের স্বাধীনতার স্পৃহাকে সাময়িকভাবে দাবিয়ে রাখা গেলেও চিরতরে মুছে ফেলা যায় না।

বিশ্বমানচিত্রে হাঙ্গেরি

আজকের দিনে হাঙ্গেরির মানুষ তাদের সেই বীরদের স্মরণ করে, যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। বুদাপেস্টের লিবার্টি স্ট্যাচু বা ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ আজও দানিয়ুব নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সেই মুক্তির বার্তা ঘোষণা করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মতোই হাঙ্গেরির ইতিহাস আমাদের শেখায়, স্বাধীনতা কোনো উপহার নয়, এটি অর্জনের বিষয়। ২২ ডিসেম্বর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বিজয়ের পথ যত কণ্টকাকীর্ণই হোক, গন্তব্য সব সময় আলোর দিকে।