রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আজ সোমবারও অস্ত্রোপচার শুরু হয়নি। টানা তিন দিন বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের সব কটি অপারেশন থিয়েটার। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। দুই মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর সকালে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা থাকলেও অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তা হয়নি।
হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) এসি নষ্ট এবং অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যার কারণে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকার খবর গতকাল রোববার প্রকাশ করে প্রথম আলো। এরপর আজ সকালেই ওই হাসপাতালে যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল আহসানসহ একটি প্রতিনিধিদল। তাঁরা তদন্ত করে দেখেন, হাসপাতালের আইসিইউ ছাড়াও করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) এবং হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) এসি নষ্ট। তখন তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হাসপাতালে এসি স্থাপন ও মেরামতের জন্য ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দের কথা জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, তাঁরা অস্ত্রোপচার বন্ধ ও দীর্ঘদিন এসি নষ্ট থাকা নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। এতে দুটো অভিযোগেরই প্রমাণ পেয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউর ছয়টি এসি, সিসিইউর তিনটি এসি এবং এইচডিইউর সব এসি নষ্ট পেয়েছেন। সাতটি অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে তিনটি পুরোপুরি অকার্যকর পেয়েছেন। অক্সিজেন সরবরাহের সংযোগে সমস্যা থাকায় বাকি চারটি অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রমও বন্ধ পেয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এসির সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান। তিনি বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সকাল আটটায় হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকেছি। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এসি ও অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যার সমাধান হবে। আশা করছি, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে চারটি ওটিতে অপারেশন শুরু হবে।’ এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালের পরিচালককে আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে ডেকেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অধিদপ্তর ও হৃদরোগ ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির আইসিইউর জন্য মোট ১২টি এসি রয়েছে। দুটি সেন্ট্রাল প্ল্যান্টের মাধ্যমে এগুলো চলে। একটি প্ল্যান্ট নষ্ট হওয়ায় ছয়টি এসি বন্ধ হয়ে যায়। আর সাতটি অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ১, ২ ও ৭ নম্বরের এসি নষ্ট আছে। ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওটির কার্যক্রম সীমিত পরিসরে আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হতে পারে। রাত পৌনে ৮টার দিকে আইসিইউর এসিগুলো সচল হয়েছে বলে ডা. মঈনুল আহসান জানিয়েছেন।
সিসিইউর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে আসে, এখানে ২টি ইউনিটে ১০টি এসি আছে। তার মধ্যে তিনটি পুরোপুরি নষ্ট। সচলগুলোর মধ্যেও কয়েকটি পুরোপুরি কাজ করছে না। এ ছাড়া এইচডিইউতে এখন কোনো এসিই চলেছ না।
স্থাপন করা হবে কেন্দ্রীয় এসি
হৃদ্রোগের রোগীরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এই হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ এবং এইচডিইউতে দুই ধাপে কেন্দ্রীয়ভাবে এসি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ জন্য প্রথম ধাপে ১ কোটি ২৫ লাখ এবং পরের ধাপে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মঈনুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে দুই ধাপে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় এসির পাশাপাশি হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতেও এসি স্থাপন করা হবে।
পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে
হৃদরোগ হাসপাতালটিতে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন রোগীর চাপ বেশি। এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় অস্ত্রোপচারের সক্ষমতা কম। তার মধ্যে তিন দিন ধরে অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে।
সোমবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল রাজশাহী শহরের মেহেরচণ্ডী এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মাহবুবুর রহমানের (৪০)। দুই মাস পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালের উত্তর ভবনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি এই রোগীর হৃদ্যন্ত্রে ভালভ স্থাপন করার কথা।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাহবুবের মুঠোফোনে কল করলে তাঁর স্ত্রী ময়না আক্তার ধরেন। তিনি বলেন, সকালে মাহবুবকে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অজ্ঞানও করা হয়। তবে অপারেশন থিয়েটারে অক্সিজেনের সমস্যার কারণে আর অপারেশন হয়নি।