গান গেয়ে ছবি তুলে আনন্দের দিন

আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো শিখো ও প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। গতকাল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুল মাঠে
ছবি: আনোয়ার হোসেন

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য অনলাইনে নিজের নাম নিবন্ধন করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু কয়েক দিন আগে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়ে বসে সে। তাই মনটা একটু খারাপ ছিল, সহপাঠীরা অনুষ্ঠানে গেলেও সে যেতে পারবে কি না। তবে সব শঙ্কা পেছনে ফেলে, ক্রাচে ভর করে সে ঠিকই এসে উপস্থিত হয়েছে। শুধু উপস্থিতই হয়নি, ক্রাচে ভর করে মঞ্চে দাঁড়িয়ে একটি গানও শুনিয়েছে। সবার করতালি পেয়ে যেন পায়ের ব্যথা কিছু সময়ের জন্য ভুলল সে।

বলা হচ্ছে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর জিপিএ–৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাত চৌধুরীর কথা। গতকাল মঙ্গলবার ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত শিখো-প্রথম আলো জিপিএ–৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভাবে উপস্থিত হয়েছে সে।

গান পরিবেশন করছে শিক্ষার্থীরা
প্রথম আলো

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুল মাঠে এ অনুষ্ঠানে দারুণ উচ্ছ্বাস নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল এসএসসি ও সমমানের আড়াই হাজার কৃতী শিক্ষার্থী। সকাল আটটায় যখন ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাস বইছিল, তখন থেকেই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

অনুষ্ঠান শেষ হয় বেলা দেড়টায়। পুরো সময় বিশিষ্টজনদের কথা শোনা, আড্ডা, নাচ, গান, স্মৃতিচারণা ও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে কাটে শিক্ষার্থীদের। নিজেরা যেমন গেয়েছে মন খুলে, তেমনি অন্যের গাওয়া গানের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে তারা। তুলেছে একক ও দলবদ্ধ ছবি। অনুষ্ঠান শেষে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার প্রেরণা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা।

সকালে নির্দিষ্ট বুথের সামনে থেকে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করে সনদ, ক্রেস্ট আর নাশতার বক্স। বেলা ১১টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি কামরান পারভেজ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আপনাদের প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশকে গড়ার পাশাপাশি আপনাদের দক্ষতার মাধ্যমে পৃথিবীকে গড়ার দায়িত্ব নিতে হবে। এ জন্য সঠিক যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে হবে। পরিবার ও নিজেদের মা–বাবার প্রতি সদয় হতে হবে।’

আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ বলেন, শিক্ষাই মানুষকে পরিপূর্ণ করে। যে শিক্ষা মানুষকে পরিপূর্ণ ও উদার হতে শেখায় এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করে, সে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘আজকে যারা সংবর্ধনাপ্রাপ্ত হয়েছে, তারাই একদিন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। প্রথম আলো এ সংবর্ধনার আয়োজন করে সবাইকে আলোকিত করেছে।’

প্রথম আলোর যুগ্ম ফিচার সম্পাদক জামিল বিন সিদ্দিক আশা প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে আরও বড় মঞ্চে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা হবে। তিনি অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শবিষয়ক উপদেষ্টা খান মো. সাইফুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ মহির উদ্দিন, শিক্ষক শারমিন আক্তার, আশিক ই রব্বানী, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এখলাস উদ্দিন খান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ রায়হান উদ্দিন, হাইস্কুলের কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিস উপকমিটির সভাপতি মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার প্রমুখ।

অতিথিদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে নৃত্য পরিবেশন করেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সদস্যরা। পরে ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সাবেক সদস্য আকাশের গড়া ব্যান্ড দল ‘অক্ষর’–এর সদস্যরা সংগীত পরিবেশন করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বন্ধু নাহিদ মন্ডল।

দিনব্যাপী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, সনদ, প্রথম আলো ই-পেপার (এক মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন এবং শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স।

দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।