কম তেলে মালাই চিকেন রেঁধে সাজিয়ার বাজিমাত

কনফিডেন্স সল্ট-প্রথম আলো পাক্কা রাঁধুনি প্রতিযোগিতায় সেরা রাঁধুনি সাজিয়া ফেরদৌসের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনেছবি: সৌরভ দাশ

টেবিলে সবজির সমারোহ। ফ্রিজে রাখা রুই, তেলাপিয়া থেকে শুরু করে আস্ত মুরগি কিংবা গরুর মাংস, মসলাপাতিরও অভাব নেই। বিচারকেরা ‘রেডি’ বলামাত্রই শুরু হলো ১০ রাঁধুনির দৌড়। ঝুড়িতে তুলে নেন রান্নার উপকরণ। এরপর শুরু হয় ৭০ মিনিটে রান্নার যুদ্ধ।

কনফিডেন্স সল্ট-প্রথম আলো ‘পাক্কা রাঁধুনি’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে’ এ চিত্রই দেখা গেল আজ বৃহস্পতিবার। চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রথম পুরস্কার জিতে নেন রাঁধুনি সাজিয়া ফেরদৌস। তাঁর থিম ছিল ‘মালাই চিকেনে জমজমাট ভোজন’। স্বাদে, ঘ্রাণে বিচারকদের মন জয় করায় সর্বোচ্চ নম্বর পান তিনি।

পুরস্কার পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে এই রাঁধুনি বলেন, কম তেল ও মসলায় তিনি রান্না করেছেন। দই, ক্রিম, বাদাম ও চিকেনের মিশ্রণে তৈরি করেছেন মালাই চিকেন। বিচারকেরা পছন্দ করেছেন, এতে দারুণ খুশি তিনি।

পাক্কা রাঁধুনি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ১০ জন রাঁধুনির সঙ্গে অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামে দ্বিতীয়বারের মতো রান্নার এত বড় আয়োজন হলো। এতে অংশ নিতে ২০০ রাঁধুনি আবেদন করেছিলেন। সেখান থেকে রেসিপি দেখে ৩২ জনকে দ্বিতীয় পর্বের জন্য নির্বাচিত করা হয়। পরে ১০ জন রন্ধনশিল্পীকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য বাছাই করেন বিচারকেরা। আর আজ চূড়ান্ত পর্বে ‘কোয়াবের মাংসের ঝুরা ভাজির সঙ্গে লেবুর কাজী’ রান্না করে প্রথম রানারআপ হন ফারাহ আক্তার। চিংড়ির স্পেশাল ঝুরা রেঁধে দ্বিতীয় রানারআপ হন শাহরিন আক্তার। বিচারক ছিলেন পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা, পেনিনসুলার নির্বাহী সু শেফ মো. জামাল হোসেন, রন্ধনবিদ রোকেয়া হক ও জেবুন্নেছা বেগম।

আজ বিকেল চারটায় মূল প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মাংস, মাছ আগে থেকেই রাখা ছিল। প্রতিযোগীরা টেবিলে বসানো চুলায় হাঁড়ি চাপিয়ে যে যাঁর রেসিপি অনুযায়ী রান্নায় মশগুল হয়ে পড়েন। কেউ রাঁধেন দুরুস কুরা, কেউ মেজবানি মাংস। আবার কেউ রাঁধেন আস্ত মাছের দুরুস। এ সময় রান্নার ঘ্রাণে মিলনায়তন ভরে উঠেছিল। এক ঘণ্টা পর আরও ১০ মিনিট সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর রান্না শেষে বিচারকেরা একে একে ডেকে নেন প্রতিযোগীদের। চলে চুলচেরা বিচার পর্ব। চারজন বিচারক প্রতিটি পদ খুব মনোযোগ দিয়ে চেখে দেখেন, পরামর্শ দেন।

রান্নায় ব্যস্ত এক রাঁধুনিরা
ছবি: প্রথম আলো

রান্না ও বিচারকাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণার পর্ব। এই পর্বে গান ও কথামালায় মেতে ওঠেন অতিথি ও দর্শকেরা। দর্শকদের গান গেয়ে শোনায় রাঙামাটির গানের দল ড্রিমার্স। তবে পাক্কা রাঁধুনি কে হচ্ছেন, তা জানার আগ্রহ ছিল সবার মধ্যে।

পুরস্কার বিতরণী পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ের আঞ্চলিক বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে জিপিএ-৫ সংবর্ধনা, ফ্যাশনপ্রেমীদের নিয়ে ফ্যাশন প্রতিযোগিতা, মাদকবিরোধী কর্মসূচিসহ নানা আয়োজন প্রথম আলো নিয়মিত করে আসছে। নতুন সংযোজন হিসেবে গত বছর থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয় পাক্কা রাঁধুনি প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রাঁধুনিরা চার দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসছেন। তাঁদের শিল্পের উপস্থাপন করছেন। আর এ উদ্যোগের সহযোগিতা করছে কনফিডেন্স সল্ট। দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রামে এত বড় আয়োজন হলো।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিউল ইসলাম
ছবি: প্রথম আলো

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, একসময় নারীরা চার দেয়ালের মধ্যে আটকে ছিলেন। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন নারীরা শিল্পচর্চা করছেন। রন্ধনশিল্পে সুনাম কুড়াচ্ছেন।

অতিথির বক্তব্যে কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের পরিচালক কানিজ ফাতেমা বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ২০০ জনের মধ্যে ১০ জন চূড়ান্ত পর্বে আসতে পেরেছেন। ১০ জনই ভালো রান্না করেছেন। সামনের দিনগুলোয় আরও নতুন নতুন রন্ধনশিল্পী উঠে আসবে এ আয়োজনের মাধ্যমে।

অনুষ্ঠানে গান শোনায় রাঙামাটির গানের দল ড্রিমার্স
ছবি: প্রথম আলো

কনফিডেন্স সল্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিউল ইসলাম প্রতিযোগীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রথম আলোর এ উদ্যোগের মাধ্যমে রন্ধনশিল্পীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। চার দেয়ালে ঘেরা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। প্রথম আলোর এ যাত্রায় অংশীদার হতে পেরে কনফিডেন্স সল্টও গর্বিত। আয়োজনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে রন্ধনশিল্প অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাবে।

সাদিউল ইসলাম আরও বলেন, এবার প্রতিযোগিতায় যাঁরা পুরস্কার পাননি, তাঁদের হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আগামীবার আবার এ প্রতিযোগিতা হবে। নিশ্চয় তখন অংশ নিয়ে পুরস্কার অনুষ্ঠানকে জমজমাট করে তুলবেন। পুরস্কার বিতরণের ফাঁকে প্রথম আলোকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সরদার নওশাদ ইমতিয়াজ। অনুষ্ঠানে অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। বক্তব্য দেন গতবারের বিজয়ী ফারজানা আক্তার। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।