বৃষ্টি কমাল বইয়ের ক্রেতা

অমর একুশে বইমেলায় বই দেখছেন পাঠকেরা। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেছবি: প্রথম আলো

গতকাল শনিবার সন্ধ্যার বৃষ্টির মুহূর্তটা বদলে দিল বইমেলা। বই সাজিয়ে রাখা টেবিলগুলো ঢেকে গেল নীল পলিথিনে। প্যাভিলিয়নের সামনে টাঙিয়ে দেওয়া হলো ত্রিপল। মেলায় আসা মানুষেরা দৌড়াতে শুরু করলেন ছাউনির খোঁজে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ফেরার সময় দেখা গেল, সবকিছু আবার সাজিয়ে এদিন আর নতুন করে বিক্রি শুরুর দম ছিল না বিক্রেতাদের।

কনফুসিয়াসের কথোপকথন, দং ইউ ছেন ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন

ততক্ষণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলার মাঠে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে। কোনো কোনো দোকানের বই ভিজেছে। দুই পাশের গেট খুলে রাখায় পাঠক সমাবেশের প্যাভিলিয়নে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ছিলেন সবচেয়ে বেশি। তাঁদের মধ্য থেকে একজন বলেন, সকালে দেখা যাবে মাঠজুড়ে রোদ পোহাচ্ছে বই।

অথচ গতকালের মেলা শুরু হয়েছিল একুশে ফেব্রুয়ারির বিকেলের চেয়ে বেশি প্রত্যাশা নিয়ে। বিক্রেতারা বলছিলেন, ভিড়ে ক্রেতার সংখ্যা ছিল ভালো। বিক্রি বাড়ছে, পাঠক আসছেন। সেই তথ্য অবশ্য বৃষ্টি আসার আগেই বিকেলের মেলায় আভাস পাওয়া গেছে।

গতকালের মেলা শুরু হয়েছিল একুশে ফেব্রুয়ারির বিকেলের চেয়ে বেশি প্রত্যাশা নিয়ে।

টিএসসির গেট দিয়ে প্রবেশ করে হাতের ডানে ইউপিএল, প্রথমা, অবসর অতিক্রম করে অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের সামনে দেখা গেল জটলা বেধেছে। তিন ভাগে ভাগ হয়ে মানুষ আড্ডা দিচ্ছেন এক জায়গায়। এর মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন চীনা অধ্যাপক দং ইউ ছেন পাঞ্জাবি গায়ে। এবার তিনি বাংলাদেশের অমর একুশে বইমেলার জন্যই এ দেশে এসেছেন। ২০১৬ সালে চীনা ভাষায় ৩৩ খণ্ডে প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলীর তিনি একজন অনুবাদক।

হাউ টু বিল্ড আ টাইম মেশিন, ভাষান্তর: আবুল বাসার, প্রথমা প্রকাশন

এবারের মেলায় আরেক অনুবাদক ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা আর তাঁর যৌথ কাজে প্রকাশিত হয়েছে কনফুসিয়াসের কথোপকথন। দং ইউ ছেন প্রথম আলোকে বলেন, সোভিয়েত রাশিয়ার আমলে গত শতকের আশির দশকে তিনি লেনিনগ্রাদে পাঁচ বছর বাংলা ভাষা শিখেছিলেন চাকরির অংশ হিসেবে। সেখান থেকে শুরু তাঁর বাংলার সঙ্গে সম্পর্ক। ভাঙা ভাঙা বাংলায় দং ইউ ছেন জানান, ইংরেজির চেয়ে তাঁর কাছে বাংলা সহজ। কথা প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়ের বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করলেন তিনি।

পাঠক সমাবেশের সামনে ততক্ষণে শুরু হয়েছে লাইট ও ক্যামেরা চালু করে লেখকের সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রস্তুতি। বৃষ্টি নামার আগমুহূর্তে নিজের বই নিয়ে কথা বলছিলেন বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি বুলবুল হাসান।

এক হাজার ছয় শ’ আঠারো নম্বর শহর, দীপেন ভট্টাচার্য, বিদ্যা প্রকাশ

বর্তমানে প্রবাসী এই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, অন্তহীন বিতর্কযাত্রা: একটি আত্মজীবনীর খসড়া বইতে তিনি বাংলাদেশের বিতর্কের ইতিহাসটাও ধরে রাখতে চেয়েছেন। কথা শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টির শুরু। ছাউনি খুঁজতে প্রথমার প্যাভিলিয়নের দিকে গিয়ে জানা গেল একটি ভালো খবর। গতকাল এই প্রকাশনা থেকে একবারে ৭০ কপির বেশি বই কিনেছেন কুমিল্লার ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া শশীদল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজ’– এর প্রতিনিধিরা। বিক্রয়কর্মীরা বলেন, তাঁরা ৭০টির বেশি শিরোনামের বই কিনেছেন এক কপি করে। গতকাল ক্রেতা বাড়ছিল প্রথমা প্রকাশনেও; আর তখনই আকাশ ঝেপে এল বৃষ্টি।

‘রিজিয়া–এমপ্রেস অব ইন্ডে: অসমাপ্ত কাব্যনাট্য’

রিজিয়া (প্রকৃত নাম রাজিয়া) ছিলেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে একমাত্র নারী সম্রাট; আর আমরা তাঁকে ‘সুলতানা’ হিসেবে উল্লেখ করলেও নিজেকে তিনি অভিহিত করতেন ‘সুলতান’ বলে। পাঁচ বছরের কম সময় তিনি দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ সময়টাও তাঁর কেটেছে দরবারের ও বাইরের শত্রুদের মোকাবিলায়; ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহ দমনের প্রচেষ্টায়।

‘রিজিয়া–এমপ্রেস অব ইন্ডে: অসমাপ্ত কাব্যনাট্য’, ভূমিকা ও সম্পাদনা: মোরশেদ শফিউল হাসান, প্রথমা প্রকাশন

দিল্লির এই নারী সম্রাটের ব্যক্তিত্ব, সাহস ও আত্মমর্যাদাবোধ তরুণ বয়সেই মাইকেল মধুসূদন দত্তকে আকৃষ্ট করেছিল। মাদ্রাজে অবস্থানকালে তিনি তাঁকে নিয়ে ইংরেজিতে একটি কাব্যনাট্য লিখতে শুরু করেন। ‘রিজিয়া–এমপ্রেস অব ইন্ডে’ নামের এই রচনা তিনি মাদ্রাজেই তাঁর নিজের সম্পাদিত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে শুরু করেন। কলকাতায় ফিরে এসেও তিনি রচনাটি সমাপ্ত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ ছাড়া রাজিয়াকে নিয়ে একটি বাংলা নাটক রচনায়ও হাত দিয়েছিলেন মধুসূদন।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবির অসমাপ্ত কাব্যনাট্যটি প্রথমবারের মতো পুস্তক আকারে প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।