১২ তারিখের ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা
সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়ে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। ৮ দফা দাবিতে আগামী মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘট পালনের কর্মসূচি দিয়েছিলন তাঁরা।
আজ রোববার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে সরকারের সঙ্গে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত দাবিগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘সরকারকে জিম্মি করে কিছু আদায় করা উচিত নয়। সরকারের সব সিদ্ধান্ত আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন হবে। অবৈধ বা অচল গাড়ি চলুক, সেটাও আমরা চাই না। তবে সড়ক আইন পুরোপুরি প্রয়োগ করলে একবারে ৮০ শতাংশ গাড়ি সড়ক থেকে উঠে যাবে। পুরোনো গাড়ি বদলে নতুন গাড়ি আনতে কিছু সময় প্রয়োজন, সেই সময় আমাদের দিতে হবে। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো একাধিক বৈঠকে সরকারকে জানানো হয়েছে এবং সরকার তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। এ জন্য আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণায় একমত পোষণ করেন। তিনি পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের টাকায় একটি আধুনিক হাসপাতাল করার প্রস্তাব দেন। সরকার রাজি থাকলে তাঁরা টাকা দিতে প্রস্তুত আছেন।
বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার বিবেচনা করবে। যেসব দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো দেখা হবে। সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের একটি কমিটি আছে, তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
অতীতের মতো পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের চাপে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার পিছু হটল কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফাওজুল কবির খান বলেন, যানবাহনের আয়ুষ্কাল নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে (বাসের ২০ বছর ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ২৫ বছর) তা বহাল থাকবে। তবে সবচেয়ে পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন গাড়ি আগে সড়ক থেকে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এত গাড়ি রাখার জায়গা নেই। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটেরও ঘাটতি আছে।
সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে চালকদের জামিন–সংক্রান্ত সড়ক পরিবহন আইনের ধারা সংশোধন, বাণিজ্যিক যানবাহনের মেয়াদ ৩০ বছর করা, বাণিজ্যিক যানের অগ্রিম আয়কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, ১২ বছর বয়সী রিকন্ডিশন্ড বাস আমদানির অনুমতি, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকদের ফেরত দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা তৈরি, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার ও অবৈধ হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন চালু করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত করা এবং শ্রমিক ফেডারেশনের বিদ্যমান ১২ দফা দাবি বাস্তবায়ন।
সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের জন্য ৬০ দিনের মধ্যে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা আয়োজন এবং সংশোধিত খসড়া প্রস্তুত করা হবে। বাণিজ্যিক যানের আয়ুষ্কাল বাড়ানোর বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। নতুন বাস কেনার জন্য সহজ শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা, সড়ক উপদেষ্টা এবং মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাণিজ্যিক রিকন্ডিশন্ড যানবাহনের আমদানির মেয়াদ ৫ বছর থেকে ১২ বছর করার প্রস্তাবের বিষয়েও ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।
এ ছাড়া বাজেটে বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর আরোপের বিষয়ে এনবিআর, বিআরটিএ, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং মালিক-শ্রমিক সংগঠন একসঙ্গে সমাধান করবে বলে জানান সড়ক উপদেষ্টা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থানা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
চালকের লাইসেন্সের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হক বলেন, বর্তমান ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং নতুন ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এ সময় ই-লাইসেন্স দিয়ে যানবাহন চালানো যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমুল গনি বলেন, ই-লাইসেন্স দেখালে মামলা না দেওয়ার বিষয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
বৈঠকে আরও ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান আবু মমতাজ মো. সাদ উদ্দিন, পরিবহন নেতা এম এ বাতেন, আবদুর রহিম বক্স ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ।